কাঁচা চামড়ার বাজারে বিশৃঙ্খলা বন্ধে কঠোর হোন

প্রতি ঈদুল আজহায় পুরো বছরের প্রায় ৬৫ শতাংশ চামড়া সংগৃহীত হয়। এ সময় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কম থাকে। কোরবানিদাতা চাইলে পশুর চামড়া ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিক্রি করলে সেটির দাম দান করে দিতে হয়। তাই চামড়ার দাম বাড়লে এর প্রধান সুবিধাভোগী হয় সমাজের দুস্থ ও অসহায় মানুষ। চামড়া বিক্রির টাকা কোরবানিদাতারা দুস্থ ও এতিমদের দান করেন।

এটি ঠিক, বেশি দামে চামড়া কিনলে ক্ষতিগ্রস্ত হন ট্যানারি মালিক। কিন্তু তারা সরকারকে দিয়ে চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করিয়ে নেন, সে দামেও কিনছেন না। কম দামে চামড়া কিনবেন, চামড়াজাত পণ্যের ক্রেতারাও সুফল পাবেন না, খুব কম দামে চামড়া বিক্রি হওয়ায় হতদরিদ্ররা বঞ্চিত হবেনÑএটি নৈতিকতা ও ন্যায্যতার কথা হলো না।

সব সুফল কেবলই পাচ্ছেন আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা। প্রতি বছর আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে দামে কারসাজি করেন বলে অভিযোগ জোরালো। কর্তৃপক্ষকে দিয়েও কম দাম নির্ধারণ করে নেন তারা। এবারও তা হয়েছে।

নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দামে চামড়া বেচাবিক্রি নিয়ে গতকাল জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকগুলোয় প্রতিবেদন ছিল। রাজধানীর পোস্তায় মান ও আকারভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ছাগলের চামড়ার দাম ১০ টাকা। কোরবানি হওয়া গরুর কাঁচা চামড়ার দাম গতবারের তুলনায় ঢাকায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। তারপরও এবার নির্ধারিত দরের চেয়ে ২৭৫ থেকে ৩০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ছাগলের চামড়া কিনতে অনীহা দেখিয়েছেন আড়তদারেরা। একেকটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ টাকায়।

৩ জুন চামড়া খাতের একাধিক বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দাম নির্ধারণ করেও নির্ধারিত দামে চামড়া কেনেননি ব্যবসায়ীরা। এটি ব্যবসায়িক অসততা! তাদের কেউ কেউ সমাজে দানশীল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতার দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা কতটা দায়িত্বশীল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

এ বছরসহ ১০ বছর কোরবানির পশুর চামড়া নির্ধারিত দামে বেচাকেনা হয়নি। ২০১৯ সালে তো বিপর্যয় ঘটে। সেবার দাম না পেয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চামড়া ফেলে দেন অনেকে। মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটে। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্পকে দূষণমুক্ত পরিকল্পিত শিল্পনগরে স্থানান্তরের জন্য ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। ২১ বছরেও এই চামড়াশিল্প নগরকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি। চামড়াশিল্প নগরের দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। সরকারের উচিত হবে নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা নিশ্চিত করা। শুধু ব্যবসায়ীরা নন, চামড়াশিল্পে এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী জড়িত। যৌক্তিক দামে চামড়া বিক্রি হলে সব পক্ষই উপকৃত হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০