Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 8:58 pm

কাঁচা পাট রপ্তানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটির ফলে বাংলাদেশের স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, যা নিরসনে ভারত সরকারের সহযোগিতার মনোভাব থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া আরও

 সহজ করা প্রয়োজন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনার প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানসহ বিভিন্ন বক্তাদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও ভারতীয় হাইকমিশন যৌথভাবে ওই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটির ফলে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, যা নিরসনে ভারত সরকারকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে।

মসিউর রহমান বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য স্থানীয় মুদ্রায় করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে এ দেশে একক কিংবা যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। দুই দেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে যমুনা রেল সেতু স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলমান, যা সম্পন্ন হলে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে।

সেমিনারে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গত এক দশকে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। প্রস্তাবিত ‘সেপা’ চুক্তির বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় আরও অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে।

হাইকমিশনার বলেন, ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাসকল্পে আধুনিক সড়ক, রেল ও নদীপথের যোগাযোগ এবং অবকাঠামো খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে সাতটি ‘ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন’ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে, যা সম্পন্ন হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সহজতর হবে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সাতটি স্থানে ‘বর্ডার-হাট’ পরিচালনার মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোক্তারা সহজেই পণ্য রপ্তানিতে সক্ষম হয়েছেন। সামনের দিনগুলোয় বর্ডার হাট কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ২০২২ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং শুল্কবহির্ভূত যোগাযোগ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় উন্নয়নের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় আয় যথাক্রমে ১৭ ও ৮ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের রয়েছে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম সীমান্ত। সীমান্ত এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, আসিফ ইব্রাহীম, মো. সবুর খান, শামস মাহমুদ, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিস উদ-দৌলা, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক মালিক তালহা ইসমাইল বারী, খায়রুল মজিদ মাহমুদ প্রমুখ অংশ নেন।

তারা বলেন, প্রস্তাবিত ‘কম্প্রিহেনসিভ প্রিফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা)’ চুক্তির বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারসহ দুদেশের শুল্ক ও প্যারা-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতার নিরসন হবে, যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।