আজকাল প্রায় প্রতিরাতে ঘুমাতে গেলে ব্যথা অনুভব করেন। একপাশ হয়ে ঘুমাতে বা শুতে পারেন না। প্রচণ্ড ব্যথা হয় কাঁধে। ঘুমানোর শতচেষ্টা করেও ঘুম আসে না। নিদ্রাহীন রাত কাটাতে হয় ব্যথার কারণে। অবশ্য শুরুতে হয়তো এত কষ্ট পেতেন না রোগী। অর্থাৎ তিন মাস বা তারও আগে হয়তো এমন ছিল না। তখন অল্প ব্যথা হতো বিশেষ করে কোনো জিনিস হাতে নিয়ে উঠাতে গেলে বা কাঁধ ঘুরিয়ে পিঠ চুলকাতে গেলে। প্রথম প্রথম রোগী ভেবে থাকেন, হয়তো অতীতে কোনো আঘাত পেয়েছিলেন। এটি তারই ফল। এরকম সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় একে বলা হয় ফ্রোজেন শোল্ডার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ কম কায়িক পরিশ্রম করে থাকেন। এ কারণে কোমর ও হাঁটু ব্যথার পড়ে তৃতীয় স্থানে আছে ফ্রোজেন শোল্ডার।
সাধারণত মধ্য বয়সে এ রোগ দেখা যায়। এটা কাঁধের এমন একটা রোগ, যাতে ব্যথার মাত্রাটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। একসময় তা অসহনীয় হয়ে পড়ে। এমনকি কাঁধের নড়াচড়াও অসম্ভব হয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীরাই জানেন এর ফলে সৃষ্ট সমস্যা জীবনকে কতটা দুর্বিষহ করে। তবে আশঙ্কার কিছু নেই। কোনো রকম অপারেশন ছাড়াই শুধু নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে এটি আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে।
ফ্রোজের শোল্ডারের কারণ
এর তেমন কোনো কারণ জানা যায়নি। দেখা গেছে, ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া বা শরীরে অতিরিক্ত মেদ, হাইপার থাইরয়েড, হƒদরোগ ও প্যারালাইসিস রোগীদের মধ্যে ফ্রোজেন শোল্ডারের প্রকোপ বেশি। কাঁধের অস্থিসন্ধিতে যে পর্দা থাকে, তার দুটি আবরণ আছে, একটি ভেতরের দিকে আরেকটা বাইরে। এ দুই আবরণের মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে, যেখানে এক ধরনের তরল পিচ্ছিল পদার্থ থাকে, যা কাঁধের নড়াচড়ার জন্য জরুরি। এ রোগে ওই দুই পর্দার মাঝখানের জায়গা ও পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। ফলে কাঁধের নড়াচড়াও মসৃণভাবে হয় না। ব্যথা সৃষ্টি করে। ব্যথা দিন দিন বাড়তে থাকে ও একসময় তা অসহ্য হয়ে পড়ে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
পরীক্ষা করলে দেখা যায়, রোগী উপরের দিকে হাত উঠানোর সময় কষ্ট পান। হাত ঘুরিয়ে পিঠ চুলকাতে পারেন না। কদাচিৎ কাঁধ কিছুটা শুকিয়ে যাওয়ার মতো মনে হতে পারে। এটা হয় ব্যথার কারণে, দীর্ঘদিন আক্রান্ত কাঁধ ব্যবহার না করার কারণে। তবে কাঁধের এক্স-রে করলে তা প্রায় স্বাভাবিক পাওয়া যায়। কোনো কোনো রোগীর বেলায় সেখানে আগে আঘাত ছিল বলে জানা যায়, তবে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে হাত ঝি ঝি করা, শক্তি কম পাওয়া ও হাত একদমই উঠাতে না পারার মতো লক্ষণ দেখা গেলে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। স্নায়ুরোগজনিত কোনো সমস্যার কারণে এমন হয়েছে কি না, তা জানা উচিত। অতীতের কোনো আঘাতের ফলে রোটেটর কাফের ছিঁড়ে গেছে কি না তা বোঝা জরুরি।
চিকিৎসা
এটি খুবই সাধারণ একটি সমস্যাÑএমন বলে প্রথমেই রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে। বয়সজনিত সাধারণ পরিবর্তন যেমন চুল পাকা, চামড়া কুচকানোর মতোই হাড় ও অস্থিসন্ধিতে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। সাধারণত সঠিক কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে তা ভালো হয়ে যায়।
রোগীকে সঠিকভাবে বোঝানোর পাশাপাশি হালকা কিছু ব্যথানাশক দেওয়া যেতে পারে। তবে গুরুত্বসহকারে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে।
ব্যায়াম বা ব্যথানাশকে কাজ না হলে কাঁধের অস্থিসন্ধিতে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিতে হবে। এতে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে তা অবশ্যই একজন অর্থোপেডিক চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করতে হবে। নতুবা হিতে বিপরীত হতে পারে। হাত অবশ হয়ে যেতে পারে বা শুকিয়ে যেতে পারে। তাই যেখানে-সেখানে চিকিৎসা নেওয়া উচিত নয়। একজন অর্থোপেডিক সার্জনই এক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। অনেক সময় রোগীরা ইনজেকশন নেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন। ইনজেকশন নিলেও ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। সবমসয় ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে।
ফ্রোজেন শোল্ডার নামক অর্ধপঙ্গুত্ব নিয়ে
আর বসবাস নয়। উপযুক্ত চিকিৎসা নিন ও সুস্থ থাকুন।
অধ্যাপক ডা. এম. আমজাদ হোসেন
এমবিবিএস, এমএস (অর্থো)
চিফ কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ
ল্যাবএইড হাসপাতাল
(সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল)
অনুলিখন: জাহিদ হাসান