Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:23 am

কাউকেই ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ দেয়া হবে না: সফিকুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাড়তি দামসহ মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অবৈধভাবে বড় থেকে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বিক্রির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অভিযান চালাবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এসব অনিয়মের বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, “কাউকেই ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ দেওয়া হবে না।”

অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারী এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এমন হুঁশিয়ারি দেন।

সরকারের নির্ধারণ করা ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য ১২৩৫ টাকা এবং ২৫ কেজির দাম ২ হাজার ৫৭১ টাকা। কিন্তু ভোক্তাদের কাছে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম বাজারে ১ হাজার ৪৫০ টাকা পর্যন্ত এবং ২৫ কেজির দাম ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে সিলিন্ডার বা বোতলজাত গ্যাস বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায় যাচ্ছে নিয়মিত। এর বাইরে বাজারে সিলিন্ডারের মেয়াদোত্তীর্ণ ও ক্রস ফিলিংয়েরও (বড় থেকে ছোট সিলিন্ডারে ভরা) অভিযোগ আছে। তাই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে।’

নিরাপত্তার বিষয়টিও এখন ‘বার্নিং ইস্যু’ হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কেন হবে? লাইফটাইম আছে। প্রস্তুতকারকদের এই জায়গায় মনোযোগ দিতে হবে। অনেক জায়গায় অতিরিক্ত লাভের আশায় সিলিন্ডার ক্রস ফিলিং করা হয়, এটি কোম্পানিগুলোর জন্য ক্ষতিকর। এখানে কোম্পানিগুলোকে মনোযোগ দিতে হবে।’

সিলিন্ডার গ্যাসের বাজার ‘অস্থির’ হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “কেন এমন হচ্ছে, এ বিষয়ে আমি গোয়েন্দা সংস্থাকে অনুরোধ করব অনুসন্ধান করতে। নির্দিষ্ট একটি চক্রের জন্য সরকার বিব্রত হবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। আমদানিকারক, উৎপাদক, বিক্রেতা পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে, ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম নিয়ে আসতে হবে।”

মতবিনিময় সভায় কোম্পানিগুলোর পক্ষে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের হেড অব সেলস জাকারিয়া জালাল জানান, এই খাতে তাদের বিনিয়োগ ২২ বছরের। তিনি বলেন, ‘২২ বছর পর ভোক্তা আমাদের ডাকল। তাহলে কি আমরা এত বছর মানুষকে ঠকিয়েছি?’

জাকারিয়া বলেন, ‘এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি দেয় সরকার, আর আমরা সিলিন্ডারে ৮২ টাকা ভ্যাট দিই। রেগুলেটরি ডিস্ট্রিবিউটর ও রিটেইলারদের জন্য বরাদ্দ রেখেছে ৭২ টাকা। অথচ এটার পরিবহন খরচ ১৬৩ টাকা।’

‘বাকি ৯১ টাকা কে দেবে? তেলের দাম বেড়েছে দুই মাস হলো। এখনও বিইআরসি ৬৫ টাকা লিটারে তেলের হিসাব করে। তাহলে কি সিলিন্ডার পরিবহনে আমাদের খরচ বাড়েনি? কে না জানে ডলারের দাম বেড়েছে, তারা কেন কম দামে ডলার ধরে দেয়? তাদের কাছে জানতে চাইলে কোনো জবাব পাওয়া যায় না।’

দোকান পর্যায়ের খুচরা বিক্রেতা হাজী বদিউল আলম বলেন, ‘আমরা একেকটা সিলিন্ডার ১ হাজার ২৬০ টাকা দিয়ে কিনি, এর বাইরে আমাদের পরিবহন খরচ আছে। আমরা লসেই বিক্রি করছি। দুই দিন পর আমরা পথে বসব। এখানে সাড়ে ১৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৭০ টাকায় বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প নেই।’ 

ওমেরা এলপিজির ডিস্ট্রিবিউটর আহমদুল্লাহ সাইদ বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব খরচে কোম্পানি থেকে এলপিজি নিয়ে আসতে হয়। ঘোড়াশাল থেকে ট্রাকে ২০৬ থেকে ২০৮ পিস সিলিন্ডারের জন্য পরিবহন খরচ পড়ে প্রায় ছয় হাজার টাকা।’ এছাড়া আলাদা করে নিজেদের বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য ট্রাকের ভাড়া এবং মজুরি যোগ হয় বলে দাবি করেন তিনি।

এলপি গ্যাস কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং ওমেরা ডিলার সেলিম খান বলেন, ‘রিটেইলারদের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের প্রতিটি সিলিন্ডারে গড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ আছে। রেগুলেটরির বেঁধে দেয়া দামেই আমরা বিক্রি করছি। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা রিটেইলারদের বলে দিই তারা যাতে ২০ টাকার বেশি অতিরিক্ত লাভ না করে।’

সভায় কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘২২ বছর ধরে বাজারে এই সিলিন্ডার ব্যবসা চলছে। অতীতে কখনও এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’