চলতি বছরের প্রথম তিন মাস

কাগুজে হিসাবে কমল খেলাপি ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারিতে বন্ধ রয়েছে ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যক্রম। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকায় ব্যাংক জোর করে কিস্তি আদায় করতে পারছে না। গ্রাহকের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে ঋণ পরিশোধ। আবার ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপিও হবেন না এই সময়ে। ফলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র মোতাবেক, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।

অন্যদিকে গত ডিসেম্বরে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে এক হাজার ৮২০ কোটি টাকা।

তথ্যানুযায়ী, গত বছরের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। ওই সময়ে বিতরণ করা ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ছিল ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৮ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এই সময়ে পরিমাণের সঙ্গে কমেছে খেলাপির হার।

অবশ্য ব্যাংকাররা বলছেন, এটি খেলাপির প্রকৃত তথ্য নয়। এটি শুধু কাগুজে হিসাব। আগামী সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। ডিসেম্বর শেষে পাওয়া যাবে খেলাপির প্রকৃত চিত্র। এখন নতুন খেলাপিদের খেলাপি হিসেবে দেখানো যাচ্ছে না। করোনা মহামারি শেষে ব্যাংকের প্রকৃত তথ্য বের হবে।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ হওয়ার পর থেকেই ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় অনেক কমে গেছে। এই সময়ে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উৎপাদনমুখী তাদের পণ্য বিক্রি করতে না পারায় আয় কমে যায়। ফলে তারা ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারেনি। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরেদের আয় কমে যাওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়ের ঋণের টাকাও ফেরত আসেনি। স্বাভাবিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ার কথা। তবে এপ্রিলে সার্কুলার দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ঋণের টাকা ফেরত না দিলেও জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গ্রাহককে নতুন করে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না। তাদের ঋণের মান ডিসেম্বরে যা ছিল তাই দেখাতে হবে। এই ছাড়ের সময়কাল আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহক কোনো অর্থ না দিলেও খাতা-কলমে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়বে না।

মূলত মহামারির কারণে ঋণ পরিশোধ ও শ্রেণিকরণের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যবসা সচল রাখার জন্য নতুন ঋণ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হবে না গ্রাহকদের। আবার মন্দার কারণে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ বেড়ে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ বাড়বে না। কারণ কোনো ঋণখেলাপি হয়ে গেলে সেই ঋণের বিপরীতে সুদ আয় দেখানো যায় না, উল্টো প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। এতে ব্যাংকগুলোর আয় কমে মুনাফা কমে যায়। নতুন নির্দেশনার ফলে ব্যাংকগুলোও প্রভিশন সংরক্ষণ থেকে মুক্তি পেল কিছুটা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০