কাজিরহাট-আরিচা রুটে ৬ কিলোমিটার যানজট

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে মাত্র তিনটি ছোট ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি ফেরি প্রায়ই বিকল থাকে। এতে পণ্যবাহী যানবাহনকে দুই থেকে তিন দিন কাজীরহাট ঘাটে আটকে থাকতে হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পরিবহণ শ্রমিকদের। গত ২৪ ঘণ্টায় দুই পাড়ে পাঁচ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে দীর্ঘ যানজট।

কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান আজ শুক্রবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফেরি স্বল্পতার কারণে এ নৌপথ এখন সবার জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ জরুরি পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঘুরে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।’

যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসার পথে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। ফলে ট্রাকসহ অনেক যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু এড়িয়ে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথ দিয়ে ফেরিতে ঢাকায় যাওয়া-আসা করছে। এতে নৌপথে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অথচ গত ১০ দিন বেশির ভাগ সময় এ নৌপথে চলাচল করছে মাত্র দুটি ফেরি।

পাবনা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমি বিশ্বাস রানা বলেন, ‘এ নৌপথে কমপক্ষে আট থেকে ১০টি ফেরির প্রয়োজন। সম্প্রতি পাঁচটি ফেরি দিয়েছিল ঘাট কর্তৃপক্ষ। ঘাটে তিন সপ্তাহ ধরে কোনো যানজট ছিল না। অনায়াসে আমরা ট্রাকসহ অন্য যান পার করতে পেরেছি। কিন্তু গত ১০ দিন ঘাটে যানবাহনের ব্যাপক চাপ থাকলেও এখান থেকে বড় ফেরি দুটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) একাধিক কর্মী জানান, এ ঘাটে যেসব ফেরি দেওয়া হয়েছে, সবই প্রায় শত বছরের পুরোনো ও ত্রুটিযুক্ত। তাই এ পরিবর্তনে সংকট আরও বেড়েছে। দু-একদিন পরই ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফেরি সকালে গিয়ে ফেরে গভীর রাতে। তাহলে ঘাটের যানজট কীভাবে নিরসন হবে?

সরেজমিনে দেখা যায়, কাজীরহাট ট্রাক টার্মিনাল থেকে শুরু করে কাশিনাথপুর-কাজীরহাট সড়কের প্রায় ছয় কিলোমিটার জুড়ে পাঁচ শতাধিক ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন ফেরির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে, আরিচা ঘাটের একই অবস্থা।

নওগাঁ থেকে আসা মজিবর রহমান নামের এক ট্রাকচালক জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী ছোট গাড়িগুলোকে ফেরিতে ওঠার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো পণ্যবাহী ট্রাককে আরিচায় যাওয়ার জন্য দুই থেকে তিন দিন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার কেউ পাঁচ দিন ধরেও অপেক্ষা করছে।

ঘাটে আটকে থাকা লালমনিরহাট থেকে আসা ট্রাকচালক মইনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “দুই দিনের বেশি সময় ধরে পণ্য নিয়ে ফেরিঘাটে আটকে আছি। যানজটের কারণে অনেক যানবাহনই এখন বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিবর্তে এই ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করছে। ফলে যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। অথচ মাত্র তিনটি ‘লক্করঝক্কর’ মার্কা ফেরিতে যানবাহন পারাপার চলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঘাটে ট্রাকের জট বাড়তেই থাকবে।”

কয়েকজন ট্রাকচালক অভিযোগ করে জানান, ঘাটে আটকে থাকায় খাওয়া ও শৌচাগার নিয়ে তাঁদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও আলো না থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় অবস্থান করতে হচ্ছে তাঁদের। ট্রাক টার্মিনাল ও আবাসিক হোটেল নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা।

বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মাত্র তিনটি লক্করঝক্কর ফেরি দিয়ে এই নৌপথ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। যেভাবে কাজীরহাট ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে, তাতে প্রতিদিন ফেরিগুলোর ৩৫ থেকে ৪০টি ট্রিপের প্রয়োজন। অথচ তিনটি ফেরি দিয়ে ১০ থেকে ১২টি ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঘাটে কোনো ট্রাক এলে সেটিকে ফেরিতে ওঠার জন্য কমপক্ষে দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এভাবে ঘাট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০