Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:23 pm

কাজুবাদামে শুল্ককর বাড়ল উদ্যোক্তাদের স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাজুবাদাম আমদানি হয় ভিয়েতনাম থেকে। ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে প্রতি কেজি কাজুবাদাম রপ্তানি করতেন সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ডলারে। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর দেশের আমদানিকারকরা কাগজ পাল্টিয়ে সেই দর দেখাতেন ১ ডলার ৮৫ সেন্ট। কাস্টমস কর্তৃপক্ষও এতদিন এ দরে শুল্কায়ন করে রাজস্ব আদায় করত। শুল্কায়ন দরের শতাংশ হারে রাজস্ব আদায়ের কারণে ব্যবসায়ীদের শুল্ককর কম দিতে হতো।

আমদানিকারকদের পণ্যের কম দর দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার সুযোগ বন্ধ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগ। কাস্টমস বিভাগ এখন কাজুবাদামের আসল আমদানি দরে শুল্কায়ন করছে। যেমন ব্যবসায়ীরা আগে যেখানে প্রতি কেজি কাজুবাদাম আমদানির বিপরীতে সরকারকে রাজস্ব দিতেন ৬৯ টাকা, সেখানে এখন দিতে হবে ২০২ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি কাজুবাদামে শুল্ক আদায় তিন গুণের মতো বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মৌলভীবাজারের মেসার্স পারফেক্ট হারবাল কেয়ারের একটি চালানে কেজিপ্রতি ২০২ টাকা করে শুল্ককর আদায় করেছে কাস্টমস।

গত বছরের ৩ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোয় ‘কাজুবাদামে আন্ডার ইনভয়েসিং’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ২ এপ্রিল ‘হাজার টাকার বাদামের আমদানি মূল্য ১৯৬ টাকা’ শীর্ষক আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দুটো প্রতিবেদনে কাজুবাদামের শুল্ক ফাঁকি দিতে ব্যবসায়ীদের আমদানি মূল্য কম দেখানোর বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চলতি মাসের শুরুতে প্রতি কেজি কাজুবাদামের শুল্কায়ন মূল্য ১ ডলার ৮৫ সেন্ট থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন ডলারে নির্ধারণ করে। এতে প্রতি কেজি কাজুবাদামে করহার দাঁড়ায় ১১৭ টাকায়। ১১ এপ্রিল পারফেক্ট হারবাল কেয়ারের আরেকটি চালানে কেজিপ্রতি ৬ ডলার দরে শুল্কায়ন করা হয়। তাতে প্রতি কেজিতে করভার আসে ২০২ টাকা।

কাজুবাদাম আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ৫ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশ দিতে হয়। শুল্কায়ন মূল্যের ওপর শতাংশ হারে শুল্ককর আদায় করা হয়। শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানোর কারণে এখন শুল্ককরও বেশি দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে কাজুবাদামে শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এটি করা হয়েছে ব্যবসায়ীরা প্রকৃত দরে মূল্য ঘোষণা না দেয়ায়। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ে।

গত সাত বছরে দেশে কাজুবাদামের অনেক কারখানা গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তারা। এসব কারখানায় বিশেষ ব্যবস্থায় কাঁচা কাজুবাদামের খোসা ছাড়িয়ে বাজারে ছাড়ার উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু আমদানিকারকদের ফাঁকির কারণে এসব কারখানার উদ্যোক্তারা বেকায়দায় পড়েন। এতে অনেক কারখানা বন্ধও হয়ে যায়।

জানতে চাইলে কাজুবাদামের প্রথম সমন্বিত কারখানা গ্রিনগ্রেইন কেশিও প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকি রোধ করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। উদ্যোক্তাদের জন্য এই খবর স্বস্তির।’

নীলফামারীর জ্যাকপট ক্যাশোনাট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইবনুল আরিফুজ্জামান বলেন, আমদানিতে ফাঁকির সুযোগ বন্ধ করায় দেশে কাজুবাদামের আরও কারখানা গড়ে উঠবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলোও আবার চালু হবে।