কাজের খোঁজে কলকাতা

অনাথ শিশুর মতো যার জীবনখানি নিস্তরঙ্গে নিথর হতে পারতো নিযুত জীবনের নিঠুর নিয়তিপাশে তিনি জুগিয়েছেন হৃৎস্পন্দনের খোরাক। দেশের জন্য লড়েছেন। শূন্য জমিনে গড়েছেন ব্যবসায় কাঠামো। জীবনের সব অর্জন লিখে দিয়েছেন মানুষের নামে। তিনিই দেশের সবচেয়ে সফল ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’-এর জনক রণদা প্রসাদ সাহা। নারীশিক্ষা ও চিকিৎসায় নারী-পুরুষ কিংবা ধনী-গরিবের ভেদ ভেঙেছেন। তার জীবনেই রয়েছে সসীমকে ডিঙিয়ে অসীমে শক্তি সঞ্চারের কথামালা। এ জীবন ও কেতন যেন রোমাঞ্চিত হৃদয়েরই উদ্দীপ্ত প্রেরণা। পর্ব-১৭………

মিজানুর রহমান শেলী: কৈশোরে কলকাতা। কেবল যাপিত জীবনের অতিবাহন নয়, বরং পেট ও পিঠের দায়ে সংগ্রামমুখর এক ঝাঁজালো কালাশ্রয়। হালকা হাওয়ায় হারানোর নেই কোনো নবারুণ। এ আলো ঝলমলে শহরের কোথাও আলাদিনের প্রদীপ জ্বলে না। তাকে তো কাজ খুঁজে বের করতেই হবে। কোথায় প্রান্ত আর কোথায় সীমান্ত তার নিকেশ রাখে কে? শিয়ালদহ স্টেশন থেকেই শুরু হলো তার কলকাতার জীবনের পথচলা। যতটা পথ হাঁটা যায় তিনি হেঁটেছিলেন বেলা-অবেলা। কাজ কিংবা আহারের খোঁজে।

শিয়ালদহ। এটি এখন বিশ শতকে এক খ্যাতনামা অঞ্চল। যদিও ১৭৫৭ সালে এ জায়গাটিকে একটি সরু বাঁধ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে এর অবস্থান। বাঁধটি পূর্ব দিক থেকে সামনে বেড়েছে। এই বাড়ন্ত প্রান্তেই ইস্টার্ন বেঙ্গলের রেলপথ পরিসমাপ্ত হয়। ফলে দার্জিলিং ও ইস্টার্ন বেঙ্গলের পাট উৎপাদনকারী জেলার সঙ্গে শিয়ালদহের সহজ সঙ্গম হলো। এখানে স্থাপিত হলো ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলস্টশন। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলটি পূর্ব বাংলার পাট ও তামাক প্রক্রিয়াজাতকারী জেলা হিসেবে প্রসিদ্ধি পায়। গড়ে ওঠে কিছু লেবার অ্যান্ড ইমিগ্রেশন এজেন্সি। বিশ শতকের গোড়ায় এখানকার ক্যামবেল হসপিটাল ও মেডিক্যাল স্কুলটি স্বাস্থ্যসেবায় যৎসামান্য পরিষেবা দিয়ে চলেছে। এর পূর্বনাম ছিল পওপার হসপিটাল। হাসপাতালের মূল ভবন থেকে খানিকটা দূরপথে স্মল-পক্সের চিকিৎসা চলে। এসব ছিল শিয়ালদহের মর্মান্তিক জীবনের গল্প। স্মল-পক্সের মতো কালো রোগের কালো থাবা সন্তর্পণে হানা দিত শিয়ালদহের প্রান্তজুড়ে বছরের যে কোনো সময়।

শিয়ালদহ পূর্বের সল্ট ওয়াটার লেক বরাবর বাহু বাড়িয়েছে। এই নিম্নবাহু যতটা বিস্তর, তার সবখানই স্র্রোতে ভিজে যায় সহসা। লবণাক্ত-জল গড়িয়ে পলি-পুষ্ট জমিনের আশায় কালি মলিন হয় বসতির ললাট। অপেক্ষার প্রহর দিঘল হয়। তক্ষণি নেমে আসে ছেলে-বুড়োর অমঙ্গল অভিসম্পাত; গালাগালির এ বৃথা গ্লানি প্রকৃতির খেয়ালিপনাকে দোলাতে পারেনি কখনও। তবে ভয়াল অসুখ-বিসুখের ক্লীষ্টতায় নগর জীবন হয়েছে রুষ্ট, বিয়োগ-বিধুর।

শিয়ালদহ থেকে আরও দক্ষিণে এগোলে আরেক শহর। এন্টালি। এখানে ছিল তখন অসংখ্য আঁকাবাঁকা সড়ক ও অলি-গলিপথ। একটি আরেকটিকে ক্রস করে পুরো শহরটাকে একটি অন্তর্জালে আবদ্ধ করেছিল। বেশিরভাগই ধনিক শ্রেণির ইউরোপীয়দের বাস। বাসভবনগুলো অনেক বিস্তৃত পরিসরে সাজানো। বসতির চাহিদা মেটাতে অনেক কিছুই এখানে স্থাপন করা হয়েছিল বটে। সাধারণ নাগরিক জীবনে এই শহরে তেমন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, তা বলা যাবে না। সেখানকার পৌর-ব্যবস্থাপনায় পয়োপ্রণালি, ওয়ার্কশপ ও বাজারব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছিল। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ছিল অনেক উন্নত। সরাসরি শিয়ালদহের সল্ট ওয়াটার লেকে উচ্চ চাপে পয়, আবর্জনা নিষ্কাশন করা হতো। কর্মসংস্থানের জন্য এখানকার কসাইখানা আর ওয়ার্কশপ হয়ে উঠেছিল নিম্ন জীবন মানের মানুষের মোক্ষ। ছিল আন্তঃশহর রেললাইন। এখানকার সার্কুলার রোড ঘেঁষে মিউনিসিপ্যাল রেলওয়েটি এগিয়ে চলেছিল শিয়ালদহের রাস্তা বরাবর। এক বিশেষ ট্রেনে এন্টালির মলমূত্র বর্জ্য চলে যেত শিয়ালদহের সল্ট ওয়াটার লেকে। শিয়ালদহের সঙ্গে ছিল রেল ও ট্রাম যোগাযোগ। দক্ষিণ এন্টালিতে ছিল ভলান্টিয়ার রাইফেল রেঞ্জ। এটি ১৮৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। কর্মযজ্ঞের সব আয়োজনেই কর্মসংস্থানের চাঞ্চল্য চোখে পড়ে। এত এত কাজ, কর্মব্যস্ত মানুষ, তবুও রণদার হাতে যেন কোনো কাজই ফলে না। কী কাজ করবেন তিনি? নিজেও ভেবে পান না। এক আনাড়ি বালক বটে!

এন্টালির পেছনে, সার্কুলার রোডের পূর্বের শহরটি বালিগঞ্জ। এখানে ছিল নয়নাভিরাম এক ময়দান। গভর্নর জেনারেলের নিরাপত্তা রক্ষীদের ব্যারাক ছিল এখানে। এটাই ছিল তাদের প্যারেড গ্রাউন্ড। এ ময়দানে কয়েকটি রোড মিলিত হয়েছিল। রোডগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছিল ইউরোপীয় বণিকদের বড় বড় সুরম্য ভবন। এসব অট্টালিকার আভিজাত্য-আকর্ষণ এক ঝলকেই যে কোনো পর্যটকের চোখে শহরের প্রসিদ্ধি প্রমাণ করত।

শিয়ালদহের পার্শ্ববর্তী আরেক শহর ভবানীপুর। এক জনবহুল শহর। এখানে ছিল বেশিরভাগ স্থানীয় লোকের আবাস। হিন্দু কারিগর শ্রেণি এই শহরে ঘর নির্মাণে ধাতব সরঞ্জাম নির্মাণের কাজ করত। আলিপুরের হাইকোর্টের প্লিডারস ও অ্যাটর্নিরাও এখানেও বাস করতেন। ভবানীপুরের লন্ডন মিশনারি সোসাইটিতে ছিল চন্দ্রাহতদের আশ্রয়স্থল বা পাগলাগারদ। কালীঘাটের রোডটি ভবানীপুরের পাশঘেঁষা। এখানে ছিল এক প্রসিদ্ধ মন্দির। কেবল সৌন্দর্যের কারণেই এটা প্রসিদ্ধ নয়, বরং এ মন্দ্রিরের মঠই ছিল এর মোক্ষ। নিষ্ঠাবান হিন্দুরা তাদের ‘ঠাকুর বাড়ি’ ত্যাগ করে এখানে এসেই পূজা অর্চনা করতেন। ফলে ইতস্তত-যত্রতত্র সব সময়ই মানুষের ও যানবাহনের জট লেগেই থাকত।

কালীঘাটে ছিল ঘনবসতি। বেশিরভাগ বাড়িগুলো ছিল হালদারদের। এখানকার মন্দিরের লাগোয়া বাড়িগুলো ছিল ব্রাহ্মণদের। রণদার কলকাতা ভ্রমণের এই কালে অবশ্য সবই ছিল নতুন নতুন আধুনিক মন্দির স্থাপনা। যদিও আধুনিক মন্দির তৈরির চল শুরু হয়েছিল ১৮০৯ সালে চৌধুরী পরিবারের হাত ধরে।

এখান থেকে আরেকটু সামনে এগোলেই টালিগঞ্জ। এখানে ছিল চার্চ মিশনারি সোসাইটির একটি শাখা। উঁচু উঁচু মন্দিরেরও ছিল আধিক্য। এরই পেছনে রুসাপুগলাই। যেখানে টিপু সুলতানের উত্তরাধিকার মহিশুর পরিবারের আবাসন। আবার ভবানীপুরের পূর্বদিকে আলিপুরে ছিল বেঙ্গল লেফটেন্যান্ট গভর্নরের বাসভবন, প্রেসিডেন্সি ডিভিশন ও চব্বিশ পরগনার হেডকোয়ার্টার। আরও ছিল ন্যাটিভ রেজিমেন্টের মিলিটারি স্টেশন। বিশাল জেলখানা, আর্মি ক্লোথিং এজেন্সি, গভর্নমেন্ট টেলিগ্রাফ ইয়ার্ড অ্যান্ড ওয়ার্কশপ।

কিশোর রণদা এসব শহরের সুখ-দঃখ, দারিদ্র্য আর আভিজাত্য সবই অবলোকন করেন। ঘুরে ঘুরে দেখেন। কিন্তু কে তাকে কাজ দেবে? কে তাকে একটু আহারের ব্যবস্থা করবেন? শ্রেণি বিভক্ত ওই সমাজে কারই বা সময় ছিল এক ছিন্নমূল কিশোরের সঙ্গে কথা বলবে। অনেক ঘুরেও তিনি কোথাও কাজের সন্ধান পেলেন না। হাতে টাকাকড়ি কিছুই ছিল না। কী দিয়েই বা তিনি ক্ষুধা নিবারণ করবেন! কোনোভাবে জল খেয়েই দিন পার করেছেন। খেয়ে না খেয়ে এভাবে বেশি দিন তো কাটানো যায় না। যে কোনো কাজই তিনি করবেন, এমন পণ তার ছিল। কিন্তু কোনো কাজই জোটে না। দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় সবাই। সবচেয়ে নিচু আর ছোট কাজ রণার চোখে পড়ে। সে কাজটা নিশ্চয় পাওয়া যাবে। ছুটে যায়। হাত লাগাতেই বকুনি। ফিরে আসে রণদা।

রণদা শিমুলিয়া থেকে পালানোর আগে মামাবাড়ির ঠিকানা জোগাড় করেছিলেন। সেই ঠিকানায় তিনি নিজেকে সোঁপতে চান না। এই কলকাতায় নিজের একটি গুরুত্ব তিনি তৈরি করতে চান। তাতে যদি মামাবাড়ি ঠাঁই নাও হয়, তবু দুঃখ নেই। মামারা বড়দাকে কলকাতায় নিয়ে এসেছেন, তাকে তো আনেননি। বরং দুষ্টুমির অভিযোগে সাহাপাড়া ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাই কাজের খোঁজে তিনি যেন এ কলকাতায় আমরণ লড়াই করতেও প্রস্তুত।

দিন শেষে রাত কাটানোর জন্য হলেও রণদাকে ওই শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছতে হতো। রেলস্টেশনে ছিল ছিন্নমূল শিশু কিংবা সহায়-সম্বলহীন মানুষের মাথা গোঁজার একটি নিরাপদ আশ্রয়। রণদাও এই আশ্রয় বেছে নিলেন। পূর্ব বাংলা থেকে যেসব প্রান্তিক মানুষ কলকাতা গিয়েছেন কাজের খোঁজে, তাদের বেশিরভাগকেই রেলস্টেশনে রাত কাটাতে হয়েছে। প্রথম বাঙালি মুসলিম উদ্যোক্তা বলে পরিচিত আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সেখ আকিজ উদ্দিনও এই শিয়ালদহ স্টেশনে রাত কাটিয়েছেন তার কলকাতা জীবনের প্রথম দিকে।

যা-ই হোক, খেয়ে না খেয়ে, ছুটে বেড়িয়ে রণদার শরীরটা প্রায় অসাড় হয়ে পড়েছে। সংশপ্তক লড়াই বৈকি! আমার বাসায় বড়দা মদন সাহা আছেন। মামারা ঠাঁই না দিলেও দাদার সঙ্গে দেখা করা তো যাবে। তিনি তো আর তাকে অচ্ছুত আচরণে তাড়িয়ে দেবেন না। এসব ভাবতে ভাবতে তিনি মামার বাসা খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন। খুঁজে পান মামার বাসা। কলকাতার শোভাবাজারে মামারা কয়েক ভাই মিলে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাদের আর্থিক অবস্থা তখন বেশ ভালো। কেউ চাকরি, কেউ ব্যবসা করতেন। যাহোক, এ বাসায় তাকে দেখে সবাই অবাক হলেন। ভাগ্নেকে তারা সেদিন গ্রহণ করেছিলেন। মামাদের মনে সংশয় বটে ছিল এই দুরন্ত দুষ্টু বালককে নিয়ে। জগৎ বিস্তৃত যার ভবিতব্য-ললাট, সে বালকের আবদ্ধ গণ্ডির সীমানা স্বভাবতই ভেঙে যায়। রণার ক্ষেত্রেও মামার বাসাতে তাই ঘটতে লাগল। কোনো না কোনো দুষ্টুমি চিন্তা তার মনে অনুক্ষণে পেয়ে বসে অজান্তে। মাঝেমধ্যেই তিনি ছোটখাটো অন্যায় করতেন। মদন দাদার মনে তাই স্নেহের এই ছোটকে নিয়ে একটি আশঙ্কা সবসময় তাড়া করত। কখন না ও কিছু একটা করে বসবে, আর তা নিয়ে দুই ভাইকেই সংকোচে পড়তে হবে। কেননা মামা-মামির সংসারে মদন সাহা ঠাঁই পেয়েছে এই করুণা যেন তার কাছে ভগবানের এক আশীর্বাদ। অযথা খোঁটা আর বকুনি তার ভাগ্যলিপি। তা মেনেই তো তাকে থাকতে হবে। কিন্তু রণদা নিজের অজান্তেই দুষ্টুমি করে বসে। তাছাড়া ও তো গ্লানি সইবার মানুষ নয়। এসব নানা শঙ্কায় তার মন বিহল হয়ে পড়ত, যা হওয়ার তা-ই হলো; একদিন তার শঙ্কা সত্যি হলো। সত্যিই সে মামার বাসায় বড় একটি অন্যায় করে বসলেন। মামারা সবাই চটে গেলেন। ভাগ্নের গায়ে হাত তোলা যাবে না। বড় হয়েছে। রাগারাগী, বকাঝকা করলেন। তারপরে চ‚ড়ান্ত জানিয়ে দিলেন, এই বাসায় তার আর কোনো স্থান নেই। তাকে চলে যেতে হবে। মামারা তাকে বাসা-ছাড়া করলেন। মদন সাহার হƒদয়ে তখন ভ্রাতৃপ্রেম উথলে ওঠে। কিন্তু কীইবা করতে পারেন তিনি। তিনি নিজেই আশ্রিত। মদন সাহা বুঝতে পারলেন রণাকে এখন গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। যে গ্রামে তার জন্য কিছুই অপেক্ষা করে না। পকেট থেকে পাঁচ টাকা বের করে রণাকে বলেনÑ যা, বাড়ি যা। কী করবি। এখানে আর থাকতে হবে না। নীরবে অলক্ষে সজলের জল আড়াল করে রণাকে বিদায় দেন মদন।

সেই গ্রাম! যেখানে অভাগা মা কুমুদিনীর বিয়োগ বিধুর স্মৃতি আর নতুন মা কোকোন দাসীর ছাইমাখা ভাতের অবমাননা ছাড়া কিছুই থাকে না। সেখানে রণাকে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে! কীভাবে সেখানে যাবেন রণা! ভাগ্য কি এতই বিনাশী, এত বড় নিয়ন্তা! না ভাগ্যের কাছে রুদ্ধ হওয়ার বিহŸলতা মেনে নিতে তিনি কলকাতা আসেননি। দাদার আদেশ তাই তিনি একটু দূরের রাস্তায় গিয়েই ভুলে গেলেন। গেলেন না গ্রামে। থেকে গেলেন কলকাতা। স্টেশনই এখন তার ঠিকানা।

রণদা স্টেশনে বসে আছেন ক্লান্ত মনে। হতভাগ্য জীবনে হতাশ হওয়ারও সুযোগ নেই। তাই মৃত্যু অবধি লড়াই করতে সাহস হারানো চলে না। হঠাৎ দেখতে পেলেন, রেলগাড়ি স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর মালপত্র কিংবা ব্যাগ-বস্তা আনা-নেওয়ায় কুলিরা কাজ করছেন। তারপর, তারা কয়েক পায়-পয়সা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। রণদা ভাবলেন, এই কাজটি তিনিও করতে পারেন। সহজে পরিচয়হীন যে কেউ সেখানে গিয়েই কাজ করতে পারেন। তবে এ কাজ পাওয়ারও প্রতিযোগিতা ছিল। কেবল লেগে পড়লেই হলো না। কিশোর রণার মতো অনেক পথশিশুই এই কাজে স্টেশনের বারান্দায় ছোটাছুটি করে। তাদের পুরোনো দল। তবে রণার সে ছোটবেলা থেকে রপ্ত করা দুরন্ত জীবন আর দল বেঁধে চলার অভ্যাস আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব কাজে দিল। সহজেই সে ওই দলে মিশে গেলেন। আস্তে আস্তে কাজও পেলেন। আধা আনা কিংবা এক আনা, দু আনা করে জুটতে লাগল। রণদার পা দুখানিও কলকাতার মাটিতে স্থিতি পেতে লাগল।

দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলার যাত্রা হলো অন্তত। সারা দিনে মিন্তিদের দলে ছুটে বেড়িয়েও রণদার চোখে সাহাপাড়ার সেই সন্ধ্যে-সাঝের আঁধার নামে না। কেবল নিরন্তর ব্যস্ত কলকাতার হই-হট্টগোল পরিবেশে রণদা ছন্দ খুঁজে ফেরে। একসময় আঁখি পাতে ভর করে ঘুমের ঘোর। ধুলো-মলিন ফুটপাত কিংবা স্টেশনেই এক টুকরো ইট অথবা কাগজ বা ন্যাকড়া জড়িয়ে মাথা রেখে ঘুম যায় রণা। পৃথিবীতে আর কেউ নেই আপন হৃদয়খানি ছাড়া, এ ভেবেই রণদার সজলে কোনো দুঃস্বপ্ন আসে না। গভীর ঘুম আর কলকাতার ব্যস্ত ছন্দে দোলা লাগে। এভাবেই চলে রণার অহর্নিশ বেলা-অবেলা।

 

গবেষক, শেয়ার বিজ

mshelleyjuÑgmail.com

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০