Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 12:45 am

কাজে বাধা এলে যোগাযোগ করুন সরাসরি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলের কাজে কোনো ধরনের বাধা এলে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে এসব নির্মূলে আরও কঠোর হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সামনে এ নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান। সারা দেশের সব জেলা থেকে আসা ডিসিরা ছাড়াও মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে দিকনির্শেনামূলক বক্তব্য দেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস নির্মূলের বাইরেও তাদের ২২ দফা নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র: বিডিনিউজ
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। অন্যদের মধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য-পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘ্ন করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা নিতে হবে জেলা প্রশাসকদের। জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিনা দ্বিধায় আপনারা এই টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি, সন্ত্রাস, মাদক এগুলো নির্মূল করবেন। এখানে কে কোন দল করে, কে কী করে ওগুলো দেখার কোনো দরকার নেই। যদি কেউ বাধা দেয়, আমি এটুকু বলতে পারি, আমি সরকারপ্রধান হতে পারি, কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা, আপনারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। আমার অফিসে যোগাযোগ করতে পারবেন। বাধা এলে আমরা দেখব।
মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান যেটা চলমান, অব্যাহত থাকবে। সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। আর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জেলা প্রশাসকদের তিনি ‘আরও নিষ্ঠার সঙ্গে’ দায়িত্ব পালন করতে বলেন।
তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটাতেও জেলা প্রশাসকদের উদ্যোগী হতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতি ইঞ্চি জায়গা যেন আমরা উৎপাদনমুখী করতে পারি। সেই সঙ্গে কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানির সরবরাহ নির্বিঘ্নে করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং এ ধরনের ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ড’ কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২’ এবং এ-সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনা অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সাধারণ মানুষ যাতে সহজে সুবিচার পায় এবং আদালতে যাতে মামলার জট কমে আসে, সেজন্য গ্রাম আদালতগুলোকে আরও কার্যকর করতে বলেন তিনি। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকরা জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে হবে। সরকারি দফতরগুলোর বিদ্যমান সেবা তৃণমূলে পৌঁছানোর জন্য তথ্যমেলা, সেবা সপ্তাহ পালনের মতো কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বাজার-ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির যে কোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন, পাচার, যৌতুক, ইভ টিজিং ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে নজরদারি বাড়ানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।