নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজধানীর গুলশানে আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্পে আট হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছে বলে ভুয়া ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ তৈরি করে একটি চক্র। এরপর বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তিতে কাজ দেয়ার কথা বলে প্রায় ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। গত বুধবার চক্রটির প্রধান ও তার দুই সহযোগীকে রাজধানীর গুলশান ও খিলগাঁও থেকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন বলেন, চক্রটি ‘সাবকন্ট্রাক্টে’ কাজ দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করছিল। এর প্রধান আলমগীর হোসাইন। তার সহযোগী শফিকুল ইসলাম প্রকল্প পরিচালক এবং ইমরান হোসাইন প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন)। তাদের কাছ থেকে ছয়টি মুঠোফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারের কপি ও ঠিকাদারদের সঙ্গে করা স্ট্যাম্প চুক্তিপত্রের কপি উদ্ধার করা হয়েছে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জাপানের ওবায়াশি করপোরেশন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের জন্য ৩০০ কোটি ঘনফুট বালু সরবরাহের কাজ পেয়েছে বলে প্রচার চালান আলমগীর হোসেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি হিসেবে আলমগীর ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন জেলা থেকে বালু সরবরাহের জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। বালুভরাটের কাজ ‘সাবকন্ট্রাক্টে’ দেয়া হবে বলে ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। এরপর কমিশন হিসেবে বালু সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
ইমাম হোসেন বলেন, নিজেকে বড় ঠিকাদার প্রমাণ করতে আলমগীর হোসেন গুলশান-১-এ অফিস খোলেন। অফিসের সাজসজ্জায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় করেন। গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় ১১০ ধরনের খাবার পরিবেশন করে ঠিকাদারদের আপ্যায়ন করেন। ঠিকাদারদের নিয়ে রিসোর্টে বড় বড় পার্টিও দেন। তাদের নিয়ে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর বালু সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্টে ‘শুভ উদ্বোধন’ লেখা ব্যানারে যমুনা সেতুর কাছে লালগালিচা বিছিয়ে কাজ উদ্বোধন করেন। তারপর এসব ছবি ও ভিডিও চিত্র বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
আলমগীর হোসেনের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক ঠিকাদার তার গুলশানের অফিসে যোগাযোগ করেন। বিপুল পরিমাণ কমিশন দিয়ে কাজের চুক্তিপত্র করেন। এভাবে অর্থ আত্মসাতের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। অভিযোগ পেয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
সিআইডি জানায়, আলমগীর হোসেন আগেও এমন প্রতারণা করেছেন। এর আগে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল নামে এক প্রতিষ্ঠান খুলে সৌদি আরবের জাল ১৫০টি ভিসা সরবরাহ করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার এবং প্রতারণার অভিযোগে প্রায় এক ডজন মামলা আছে।