কাজ না করেই ২১ কোটি টাকা আত্মসাৎ

হামিদুর রহমান: সময়মতো ঠিকাদার কাজ করতে পারেননি। করেছেন চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন। কাজ তো করেননি, উল্টো প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ২১ কোটি টাকা। আত্মসাৎ কাজে সহযোগিতা করে লাভবান হয়েছেন প্রকৌশলীও। প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের যোগসাজশে গৃহায়ন ও গণপূর্তের একটি প্রকল্প থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয়ের (সিএজি) কমপ্লায়েন্স অডিটে এই অনিয়ম উঠে এসেছে।

সূত্রমতে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও সদ্য সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ-ব্যয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য হিসাবের ওপর ২০১৯-২০ অর্থবছরের কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয়। সম্প্রতি এ রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। রিপোর্টে ৩০টি প্রকল্পে ৬৮ হাজার ৯৯৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯ হাজার ৯৫৫ টাকার অনিয়ম উঠে এসেছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্পে প্রায় ২১ কোটি টাকার অনিয়ম রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, জাতীয় গৃহায়নের অধীনে রাজধানীর জয়নগর এলাকায় আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ২ নাম্বার ভবন এবং ‘১০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প’-এর ভবন নির্মাণের জন্য ‘মেসার্স প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড’-এর সঙ্গে চুক্তি করা হয়। প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন গৃহায়নের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুনিফ আহমেদ। চুক্তি শর্তানুযায়ী ঠিকাদার সময়মতো ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেনি।

অডিট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ভবন নির্মাণসংক্রান্ত নথি, ক্যাশবুক, চুক্তি, বিওকিউ (বিল অব কোয়ালিটি) পর্যালোচনা করে দেখতে পান, রাজধানীর জয়নগর এলাকায় আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পে ২ নম্বর ভবন এবং ‘১০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প’-এর ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স প্রজেক্ট বিল্ডার্স লি.’-এর সঙ্গে চুক্তি হয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চুক্তি মোতাবেক যথাসময়ে কাজ সম্পাদন না করলেও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুনিফ আহমেদের একক ক্ষমতাবলে যোগসাজশে অবৈধভাবে ১৩ দফায় দফায় বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক থেকে প্রায় ১৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজাট উত্তোলন করেছেন। যেটি আয়ক, ভ্যাট-ট্যাক্সসহ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

সিএজি’র অডিট রিপোর্টে দেখা যায়, ক্যাশবুক ও ব্যাংক বিবরণীতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স প্রজেক্ট বিল্ডার্স লি.’ কোনো প্রকার বিল দাখিল করেনি, কাজ সম্পাদনের স্বপক্ষে কোনো মেজারমেন্ট বুক (এমবি) সংরক্ষণ করা হয়নি এবং কাজ সম্পাদন ব্যতীত নির্বাহী প্রকৌশলীর একক স্বাক্ষরে হিসাবরক্ষকের স্বাক্ষর ব্যতীত চেকের মাধ্যমে ঠিকাদারকে প্রায় ১৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এমনকি পরিশোধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আয়কর, ভ্যাট ও জামানত বাবদ ৩ কোটি ২৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা কর্তন দেখানো হলেও সংশ্লিষ্ট খাতে জমা না করে ব্যাংক থেকে উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অর্থাৎ আয়কর, ভ্যাট ও জামানত কর্তনের ক্যাশবুকের পরিশোধ অংশে উল্লেখ প্রকৃতপক্ষে এ বাবদ কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। ফলে কাজ সম্পাদন না করেই ১৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার বা ২১ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে।

জানতে চাইলে মিরপুর গৃহায়ন-২-এর বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী কাওসার মোর্শেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আইনগতভাবেই বিষয়গুলো মোকাবিলা হচ্ছে। এছাড়া অনেক আগেই মুনিফ সাহেবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’ চাকরিচ্যুত করা হলেও তো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও মুনিফ আহমেদ বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এসব অর্থ ফেরাতে গৃহায়ন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনাÑএমন প্রশ্নে কাওসার মোর্শেদ বলেন, ‘প্রজেক্টের কার্য সম্পন্ন না করেই তারা যে অর্থ আত্মসাৎ করেছে সেই অর্থ ফিরিয়ে আনতে মামলা করা হয়েছে। নতুন করে আরও আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২৪ জুন ২০১৭ থেকে ১০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত এসব অর্থ বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

নিরীক্ষার সুপারিশে বলা হয়েছে, কাজ সম্পাদন ব্যতীত কাজের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী মুনিফ আহমেদ হতে আলোচ্য টাকা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০০-এর ধারা ২২ অনুযায়ী আদায়সহ প্রশাসনিক/শৃঙ্খলামূলকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণে বলা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুনিফ আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিষয়গুলো এককভাবে হয়নি। চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। অনেক আগেই আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। আমিও বিষয়গুলো আইনগতভাবে মোকাবিলা করছি। এর বাইরে আমার পক্ষে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০