Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:43 am

কাটিয়ে উঠুন বিষণতা

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে ৩৫ কোটি লোক বিষণœতায় আক্রান্ত। বিশ্বজুড়ে এটি একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বর্তমানে মনসিক অক্ষমতার চতুর্থ কারণ হিসেবে বিষণœতাকে চিহ্নিত করা হয়। ২০২০ সাল নাগাদ এটা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবেÑএমনই মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

 

কীভাবে বুঝবো

বিষণœতা সাধারণত মন খারাপ নিয়ে দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে কাজকর্মে আনন্দ না পাওয়া, অল্পতে রেগে যাওয়াও বিষণœতার লক্ষণ। তাছাড়া রাতে ঘুম কম বা বেশি হওয়া, ক্ষুধা কম বা বেড়ে যাওয়া, শরীরের শক্তিক্ষয় প্রভৃতিকে বিষণœতার উপসর্গ ধরা হয়। বিষণœতার কারণে মনোযোগ দিয়ে কাজ না করতে পারা, নিজেকে দুর্বল মনে করা, মূল্যহীন মনে করা, ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মনে হওয়া, কাজে আনন্দ না পাওয়া, চুপচাপ হয়ে যাওয়া, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা কমে যাওয়া, আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা, জৈবিক চাহিদা কমে যাওয়াসহ আরও অনেক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

উন্নত বিশ্বে এটা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। উপরোক্ত উপসর্গগুলো মূলত উন্নত বিশ্বেরই। সমাজ ও দেশভেদে উপসর্গের ভিন্নতা দেখা গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতীয় উপমহাদেশে বিষণœতার শারীরিক উপসর্গ  বেশি। আরও দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বে বসবাসকারী উপমহাদেশবাসীর শারীরিক উপসর্গ বেশি। আমাদের দেশে মন খারাপ যে একটা রোগ ও তার চিকিৎসা আছে বা করা দরকারÑএমন চিন্তাও করা হয় না।

 

পরিণতি

বিষণতার সামাজিক দায়ভার অনেক। এর সবচেয়ে করুণ পরিণতি হতে পারে আত্মহত্যা। সারা বিশ্বে আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে বিষণœতা অন্যতম। তাছাড়া কর্মসময় ক্ষতি, পারিবারিক অসুবিধা, সামাজিক ভারসাম্যতায় অসুবিধাসহ জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে বিষণতা প্রভাব ফেলে।

কী করবো

বিষণœতার উপস্থিতি বুঝতে পারলে আত্মীয়-স্বজন ও বিশ্বস্ত বন্ধুকে বিষয়টি জানান। মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়া যেসব কাজ করতে ভালো লাগে, যাতে আনন্দ পানÑসেগুলো করুন। নিয়মিত গোসল করা, নখ কাটা, দাঁতের যতœ, পরিষ্কার পোশাক পরিধানও বিষণœতা কমাতে পারে।

হালকা ব্যায়াম করুন, খেলাধুলায় অংশ নিন। সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকুন।

প্রিয়জনের মধ্যে বিষণœতার লক্ষণ দেখা দিলে তাকে দ্রুত মনোরোগ চিকিৎসকের

কাছে যেতে সাহায্য করুন। আত্মহত্যার প্রবণতা থাকলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করুন। তার সঙ্গে থাকুন সব সময়। আত্মহত্যা-সংক্রান্ত তার যে কোনো বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নিন। বিপজ্জনক কোনো বস্তু বা চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ বেশি পরিমাণে তার হাতের নাগালে রাখবেন না। তার কোনো অনাকাক্সিক্ষত আচরণের জন্য বকাঝকা, সমালোচনা করবেন না। তাকে সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে উৎসাহ দিন।

বিষণœতা চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও পরিবারের

সদস্য-বন্ধু সবার ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নিলে তাকে কর্মমুখর আনন্দের জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।