Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:48 pm

কানের মধ্যে শোঁ-শোঁ শব্দ

যদি কোনো ব্যক্তি কানে ভোঁ-ভোঁ, শোঁ-শোঁ ঘণ্টার মতো ধ্বনি অনবরত শুনতে থাকেন, তখন তাকে টিনেটাস বলা হয়। বয়সের কারণে কানের সমস্যা, আঘাত বা সারকুলেটুরি সিস্টেম ডিজঅর্ডারের লক্ষণ হিসেবে কানে টিনেটাস হতে পারে। পৃথিবীতে প্রতি পাঁচজনের একজন এ রোগে ভুগে থাকেন। যেসব জায়গায় শব্দদূষণ বেশি, সেখানকার মানুষের এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এ সমস্যায় নারীদের চেয়ে পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হন।

আমাদের কানের ভেতর ক্ষুদ্র লোম আছে, যেগুলো শব্দতরঙ্গের সঙ্গে নড়াচড়া করে। এই কোষগুলো একধরনের ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল অষ্টম ক্রেনিয়াল নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক এই সিগন্যালের প্রতিক্রিয়া রূপে সিগন্যাল পাঠায়। এজন্য আমরা শব্দ শুনতে পাই।

এই লোমগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা সঠিকভাবে কাজ না করলে মস্তিষ্কে অনিয়মিত এবং ভুল ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস পৌঁছায়, ফলে

টিনেটাস আক্রান্ত ব্যক্তি কানে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান। এ ছাড়া

উচ্চ শব্দ, কানে ময়লা জমা ও কানের মধ্যে হাড় বেড়ে গেলেও টিনেটাস হতে পারে।

বয়স ৫০-এর বেশি, অসহনীয় উচ্চ শব্দ, ধূমপান ও কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যায় যারা আক্রান্ত থাকেন, তাদের এ ধরনের সমস্যা হয়। অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করা, মানসিক চাপে থাকা, ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া, মনোযোগে বিঘœ, বিষণœতা, উদ্বেগ ও বিরক্তি প্রকাশ প্রভৃতি এর লক্ষণ।

চিকিৎসা: টিনেটাসে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর; এ সমস্যা থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া যায়। দুই হাত দিয়ে কানের পেছন থেকে সামনের অংশে ৭০ থেকে ৭৫ বার ঘষতে হবে। বৃদ্ধাঙ্গুল সোজা রেখে কানের ভেতরে ও বাইরে নিন। ৭০-৭৫ বার এই ব্যায়াম করতে হবে।

ব্যায়ামের নিয়ম: দুই হাত মাথার পেছনে নিয়ে ঘাড়ের ওপরের অংশে যে গর্ত আছে, ঠিক তার ওপরে যে উঁচু জায়গা আছে, সেখানে তর্জনী বা ইনডেক্স ফিঙ্গার দিয়ে ৭০-৭৫ বার মাথায় চাপ দিন। এরপর কপালের দুই পাশে ঘষতে হবে ৫-১০ বার। মাথার পেছনে, কানের ওপরে ও পাশে কিছু ট্রিগার পয়েন্ট আছে, যেগুলোয় ডিপ ফ্রিকশন (জোরে চেপে ধরা) করলে অল্প দিনের মধ্যে টিনেটাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

সতর্কতা: অনেকেই না জেনে বাদ্যযন্ত্র বাজান, পিস্তল ও মেশিনগান চালান। এতে টিনেটাস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ফলে এসব করার কারণে কানে প্রটেকশন ব্যবহার করতে হবে। উচ্চ স্বরে হেডফোনে গান শোনা যাবে না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রচুর পানি খেতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অধ্যাপক আবু সালেহ আলমগীর

চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অব ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন

এ-ওয়ান হাসপাতাল, ঢাকা