কান দিয়ে অনেকেরই পানি ও পুঁজ পড়ে। কানপাকা রোগ হয় অনেকের। পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ।
কারণ
বাংলাদেশের মতো অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোয়ও রোগটির প্রাদুর্ভাব রয়েছে। দারিদ্র্যতা, অপুষ্টি, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্য শিক্ষার অভাব এজন্য দায়ী।
লক্ষণ
কান দিয়ে পানি কিংবা পুঁজ পড়া
কম শোনা
মাথা ঘোরা
কানে শোঁ শোঁ, ভোঁ ভোঁ
আওয়াজ শোনা
কানপাকা রোগ কাদের বেশি হয়
রোগটি যেকোনো বয়সে হতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়ে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শহরবাসীর তুলনায় গ্রামের মানুষের রোগটি বেশি হয়। কান দিয়ে পানি কিংবা পুঁজ পড়া সাধারণত শৈশবে শুরু হয়।
শিশুর কান দিয়ে পানি বা পুঁজ
আসার কারণ
সব মানুষের ইউস্টেশিয়ান টিউব নামক একটা টিউব আছে, যার এক মাথা থাকে মধ্য কর্ণে। আরেক মাথা থাকে নাকের পেছনে ন্যাজোফেরিংস নামক স্থানে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই টিউবটা থাকে খাটো, প্রশস্ত ও একদম সোজাসুজি। ফলে শিশুদের বুকের দুধ অথবা বোতলে দুধ কিংবা পানি খাওয়ানোর সময় শিশুর মাথার দিকটা একটু উঁচু না করে ফ্লাট অবস্থায় থাকে, তখন এই তরল কিছুটা হলেও মধ্য কর্ণে চলে যায় এ টিউব দিয়ে। পরবর্তী সময়ে মধ্য কর্ণে ইনফেকশন সৃষ্টি করে কান পাকা রোগ। এছাড়া বাচ্চাদের ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগে, আপার রেসপিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন বেশি হয়, টনসিলে ইনফেকশন হয়, সাইনোসাইটিস হয়, এডিনয়েড বেশ বড় হয়ে ইউস্টেশিয়ান টিউবের নরমাল কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। এসব কারণে প্রথম দিকে হঠাৎ করে কানে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়, জ্বর থাকে, এরপর কানের পর্দা ফুটো হয়ে পানি বেরিয়ে আসে। ওই সময় ঠিকমতো ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেলে পর্দার ছিদ্রটি স্থায়ী হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে কানে ইনফেকশন হওয়ার কারণে কান দিয়ে পানি কিংবা পুঁজ আসে।
দুই ধরনের কানপাকা রোগ
সেফ টাইপ (টিউবোটিমপেনিক টাইপ), সাধারণত এটাতে তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায় না
আনসেফ টাইপ (এটিকোএন্ট্রাল টাইপ), এ ধরনের কান পাকা রোগ থেকে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যা প্রাণের জন্য হুমকিস্বরূপও বটে। যেমন ব্রেইনএবসেস, মেনিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস, ফেসিয়াল প্যারালাইসিস
পরামর্শ
গোসলের সময় যেন কোনোভাবেই কানে পানি ঢুকতে না পারে। প্রয়োজনে ইয়ারপ্লাগ দিয়ে গোসল করাবেন। তা না হলে তুলা তেলে ভিজিয়ে অতিরিক্ত তেল চিপড়িয়ে ফেলে দিয়ে তুলা কানে দিয়ে গোসল করাবেন
পুকুরে কিংবা নদীতে ডুব দিয়ে গোসল করবেন না
রেফ্রিজারেটরের পানি,
আইসক্রিম, ঠাণ্ডা পানীয় প্রভৃতি পরিহার করে চলবেন
সতর্কতা
অযথা কান খোঁচাবেন না। ম্যাচের কাঠি, মুরগির পাখনা, ক্লিপ, নখ প্রভৃতি দিয়ে কান চুলকাবেন না। রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে কান পরিষ্কার করাবেন না। সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা, জ্বর, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলবেন।