নিজস্ব প্রতিবেদক: কাপ্তাই হ্রদে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন করা থেকে সরে গেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা-বিষয়ক কর্মজোটের (বিডব্লিউজিইডি) একটি চিঠির জবাবে এডিবির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এডিবির দক্ষিণ এশীয় জ্বালানি বিভাগের প্রধান বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হংওয়ে ঝ্যাং জানান, এডিবি এরই মধ্যে সম্ভাব্য ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের তালিকা থেকে কাপ্তাই হ্রদের প্রকল্পটি বাদ দিয়েছে।
চিঠিতে হংওয়ে ঝ্যাং ইমেইলে আরও জানান, কাপ্তাই ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়নের পরিবর্তে এডিবি বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ ও বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি সমীক্ষা বাস্তবায়ন করছে। এ সমীক্ষার প্রতিবেদনে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাবসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুসারে এডিবি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
২০১৯ সালে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের হ্রদে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পাঁচ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার জন্য এডিবির কাছে প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়। এর আলোকে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) একটি সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করে।
প্রকল্পটির সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতিকর প্রভাব উল্লেখ করে বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপের পক্ষ থেকে এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান কেনিচি ইয়োকোয়ামার কাছে প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চাওয়ার পাশাপাশি প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার দাবি জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, লক্ষাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সদস্যদের উচ্ছেদ করে ও ৭৭৭ বর্গকিলোমিটার জমি প্লাবিত করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করে। আদিবাসীদের এই ভূমিতে ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করলে তাদের পূর্বপুরুষের ভূমি ফিরে পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। ভাসমান সৌর-প্যানেল থেকে নির্গত অ্যালুমিনিয়াম, কপার ও ক্যাডমিয়াম লেকের পানি দূষিত করবে, যা মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাছাড়া রাঙামাটি শহরবাসীও পানীয় জলের জন্য কাপ্তাই লেকের ওপর নির্ভরশীল। লেকের পানির দূষণ জনস্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
উল্লেখ্য, খসড়া জাতীয় সৌর জ্বালানি রোডম্যাপে কাপ্তাই লেকে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগ রংপুর ও যশোরে আরও ১০০ মেগাওয়াট ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। অপরদিকে পরিবেশবাদি সংগঠনগুলো পানিদূষণের ঝুঁকি থাকায় বাংলাদেশের মতো প্লাবনভূমিতে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার দাবি জানিয়েছে।