কারও কোনো চাপে আমাদের কিছু আসে যায় না

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিদেশি শক্তির যে চাপই আসুক না কেন, জনগণের স্বার্থে যা করা দরকার, সরকার তা করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই, যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে, এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ, আর ওপরে আল্লাহ আছে, আর আমার বাবার আশীর্বাদের হাত আমার মাথায় আছে। কাজেই, কে কী চাপ দিল, না দিলÑএতে কিছু আমাদের আসে-যায় না। জনগণের স্বার্থে যেটা করার আমরা সেটাই করব। জনগণের কল্যাণে যে-ই কাজ করার সেটাই করব।’

গতকাল সোমবার বিকালে গণভবনে কাতার সফরের বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলন যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। বরাবরের মতো তিনি সমসাময়িক নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। সূত্র: বিডিনিউজ।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘হয়রানি’ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি খোলা চিঠি ছাপা হয়। ওই চিঠির সূত্র ধরে এক সাংবাদিক জানতে চানÑআগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারপ্রধান কোনো আন্তর্জাতিক চাপ অনুভব করছেন কি না বা আন্তর্জাতিক কোনো চাপ রয়েছে কি না?

প্রশ্ন শুনে হেসে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কোনো চাপে নতি স্বীকার না করার বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এ রকম বহু চাপ তো ছিল, পদ্মা সেতুর আগে তো কম চাপ দেয়া হয়নি। কোনো একটা দেশের একেবারে সেই অ্যাম্বাসাডর থেকে শুরু করে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টেলিফোনের ওপর টেলিফোন, হেনতেন… কেন? একটা ভদ্রলোক একটি ব্যাংকে এমডি, তাকে এমডি পদে রাখতে হবে। এমডি পদে কী মধু, তা তো আমি জানি না। আইনে আছে ৬০ বছর, হয়ে গেছে ৭০ বছর বয়স। তার পরও এমডি পদে থাকতে হবে। একটাই হয়, এমডি পদে থাকলে বোধহয় মানি লন্ডারিং করা যায়, এই তো সুবিধা। পয়সা বানানো যায়, পয়সা মারা যায়, গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই চাপও কিন্তু শেখ হাসিনা সহ্য করে চলে আসছে। তারপর নিজের পয়সায় পদ্মা সেত বানায়া তাদের দেখালাম, ওই চাপে আমাদের কিছু আসে-যায় না। ঠিক আছে? আর কিছু লাগবে?’

ওই খোলা চিঠির বিষয়ে আরেক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা বিবৃতি তো নয়, এটা একটা বিজ্ঞাপন এবং যে ৪০ জনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেটা আমাদের বিশেষ একজন ব্যক্তির পক্ষে, এটার কী (উত্তর) দেব জানি না, তবে আমার একটা প্রশ্ন আছে। আমার প্রশ্নটা হলোÑযিনি এত নামিদামি, নোবেল প্রাইজপ্রাপ্ত, তার জন্য এই ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়। এটাই আমার প্রশ্ন, আর কিছু নয়। অ্যাড দিতে হলো কেন?’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে যা-ই হোক, আমার দেশে কতগুলো আইন আছে। সেই আইন অনুযায়ী সবকিছু চলবে এবং সেটা চলে। আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরা শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করি, যারা ট্যাক্স ঠিকমতো দেয়, সেটার আলাদা বিভাগ আছে, ট্যাক্স আদায় করে। কেউ যদি এখন এসব বিষয়ে কোনো রকম আইনভঙ্গ করে বা শ্রমিকদের কোনো অধিকার কেড়ে নেয়, শ্রম আদালত আছে, সেটা দেখে। এ ক্ষেত্রে আমার তো কোনো কিছু করার নেই সরকারপ্রধান হিসাবে। কাজেই এখানে আমাকেই বা কেন বলা হলো? এর বাইরে আমি আর কী বলব? পদ্মা সেতু কিন্তু করে ফেলেছি, খালি এইটুকু সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।’

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অনেক এজেন্সি ‘উš§ুখ’ হয়ে আছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০ জনের নামে আসছে, ওটার পেছনেও কিছু অ্যাম্বিশন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যাদেরই ইচ্ছা, তারা জনগণের কাছে যাবে, নির্বাচন যাতে অবাধ-সুষ্ঠু হয়, সেজন্য আমি তো আগেই বলে দিলাম, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কী কী সংশোধনী এনেছি বা কীভাবে সংস্কার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পরের সন্ত্রাস-সংঘাত, ২০০৬ সালের ভোটারবিহীন ভোটার তালিকা এবং ২০০৭ সালের মতো নির্বাচন আয়োজনের পথ বন্ধ করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন জনগণের ওপর নির্ভর করে যে, জনগণ কীভাবে চায়, আমাদের প্রস্তুতি সবসময় আছে যে, জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’

বিগত কয়েকটি উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ কি ভোট দিতে পারেনি? পেরেছে তো। নির্বিঘেœ তারা ভোট দিয়ে গেছে। এই ভোটগুলো নিয়ে তো কেউ একটা কথাও বলতে পারেনি। পেরেছে? সরকারে থাকলেও যে নির্বাচন সবসময় নির্বিঘœ হতে পারে, শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে, অবাধ-নিরপেক্ষভাবে হতে পারে, সেটা তো আমরা প্রমাণ করেছি। আর আমাদের কী প্রমাণ করতে হবে? আর কী প্রমাণ করতে হবে, সেটা তো আমার প্রশ্ন।’

আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সংলাপ কার সঙ্গে করব? আমি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সংলাপ করেছি, তার রেজাল্টটা কী? নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি। ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই নিজেদের নির্বাচন থেকে সরে তারপর নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলা করে আইভী রহমানসহ আমাকে হত্যার চেষ্টা, বোমা রেখে হত্যার চেষ্টা যারা করেছে আমি তাদের সঙ্গেও বসেছি শুধু দেশের স্বার্থে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০