Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 12:38 pm

কারও চাপে ইভিএম থেকে সরে আসা হয়নি: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইভিএম নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নির্বাচন কমিশন সংখ্যাধিক্যের মতামতের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভোট নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো দলকে ভোটে আনতে বা কারও চাপে কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সিইসি। আগাম নির্বাচন সম্পর্কিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং ইভিএমের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। নির্বাচন ভবনে এ ব্রিফিংয়ে চার নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপিসহ সংলাপ বর্জন করা দলগুলোকে বরাবরই ভোটে আসার আহ্বান জানানো অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকট নিরসন করা। বড় কোনো দল নির্বাচনে না এলে তা লিগ্যালি সিদ্ধ হলেও পুরো লেজিটিমেট হবে না।’

তিনি বলেন, ‘কাউকে জোর করে ভোটে আনার বিষয়টি কমিশনের নয়। দলগুলোকে ভোটে আসতে শেষ পর্যন্ত আহ্বান অব্যাহত থাকবে। আগাম নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই। এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, শতভাগ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা ইভিএমে যেমন সম্ভব নয়, ব্যালটেও পুরোপুরি সম্ভব নয়। বিষয়টা আপেক্ষিক হতে পারে। আমরা সবসময় বিশ্বাস করেছিলাম ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোট অনেক বেশি নিরাপদভাবে করা সম্ভব হয়। এটা যান্ত্রিক কারণে…।

ইভিএম নির্বাচনে কোনোভাবেই বড় চ্যালেঞ্জ নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইভিএম মোটেই বড় চ্যালেঞ্জ নয়। আমাদের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছেÑযে রাজনৈতিক সংকটটা বিরাজ করছে, নির্বাচনে সবাই বা প্রধানতম দলগুলো অংশ নেবে কি না, সেটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ইভিএমে ভোট করলে পোলিং প্রসেস সহজ হয়। নির্বাচনে বড় দলগুলো একেবারেই অংশ না নিলে নির্বাচনের লিগ্যালিটি নিয়ে কোনো সংশয় হবে না।’

তবে লেজিটিমেসি শূন্যের কোটায় চলে যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘এটা আপেক্ষিক। লেজিটিমেসি ও লিগ্যালিটি বুঝতে হবে। লিগ্যালি নির্বাচন শুদ্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু লেজিটিমেট পুরোপুরি হবে না।’

সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশন সবসময় আন্তরিকভাবে চায় সব দল ভোটে অংশ নিক। সে লক্ষ্যে ইসির প্রয়াস শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কাউকে জোর করে আমরা আনতে পারছি না। কিন্তু যেটা করার সে আপিল করেই যাচ্ছি। আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন তাও নয়। সংকটটা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে থাকে, অথবা সরকারি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের হয়ে থাকে, আমরা বলবো যে রাজনৈতিক সংকটগুলো আপনারাই নিরসন করেন। তাহলে নির্বাচনটা সহজ ও ইসির জন্য অনুকূল হয়ে যাবে।’

রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ইসির কোনো ভূমিকা না রাখার বিষয়টি আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে সিইসি বলেন, ‘এখানে ইসি কোনো বড় রোল প্লে করতে পারবে না। এটাই আমাদের বড় রোলÑপ্লিজ আসেন, আসেন নির্বাচনে। আপনারা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করুন, বিরাজমান দূরত্ব ও সংশয়, বিরোধ থাকলে তা মিটিয়ে ফেলেন। এককথায় বলেছি, সব দল অংশগ্রহণ করলে গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে সে নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও অনেক প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, ইভিএম থেকে সরে আসা হয়েছে সেদিন। এ নিয়ে নানা সংশয় বাজারে দেখা দিয়েছে। এটা কি চাপে করা হলো, নাকি এটা করা হলো, ওটা করা হলো। এটা নিয়ে কমিশন দীর্ঘ আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ সিদ্ধান্ত নিতে কোনো চাপ ছিল না উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘এর বাইরে কোনো চাপে করা হয়েছে কি না বা বিএনপিকে ভোটে আগ্রহী করার জন্য করা হয়েছেÑএ ধরনের কোনো চিন্তা-চেতনা আমাদের মধ্যে ছিল না। দ্বিধাবিভক্ত ছিলাম আমরা। দুজন মতামত দিলেন ইভিএমের মাধ্যমে কিছু হোক, আমরা তিন জন বললামÑএটা অনিশ্চয়তা, এটা সমর্থন করছি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আগাম ভোটের প্রশ্নই আসে না। আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি না। আমরা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির।’ দলগুলোকে ভোটে আসার জন্য প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি জানান, দলগুলোকে আবারও অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে।

সাংবাদিক নীতিমালা ও ভোটের দিন মোটরসাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি জানতে চাইলে সিইসি তা এড়িয়ে যান। এখন এ নিয়ে আলোচনা করতে চান না তিনি।