কারণ ছাড়াই তিন মাসে শেয়ার দর বেড়েছে ৩০০ শতাংশ

সাইমউল্লাহ সবুজ: এক বছরের বেশি সময় ধরে উৎপাদনে নেই খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। রপ্তানিমুখী ব্যাগ তৈরির কারখানা বন্ধ করে ওই কারখানায় এখন ভাড়ায় অন্য কোম্পানির জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করছে। কারখানা বন্ধ থাকলেও বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) চলতি বছরের গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা বা ৩০০ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানে না কোম্পানি বা কর্তৃপক্ষ।

ডিএসইর তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের গত ১৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৯ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর থেকে ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে কোম্পানিটির শেয়ার দর ও লেনদেন। গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারদর পৌঁছায় ৭৯ টাকা ৬০ পয়সায়। এ হিসেবে প্রায় তিন মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা বা ৩০০ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির লেনদেন হয় চার কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

ব্রোকার হাউস-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে উৎপাদন বন্ধ এবং লোকসানে রয়েছে এমন কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়ে থাকে। বিনিয়োগকারীদের মাঝেও এই ধরনের শেয়ার ক্রয়ে এক ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই অতি লাভের আশায় উল্টো লোকসানের সম্মুখীন হয়।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন,  বাজারে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার দর বৃদ্ধিতে সন্দেহ রয়েছে বিএসইসির। কোম্পানিটি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। উল্লেখযোগ্য লেনদেনের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিষয়ে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব তপন কুমার সরকার শেয়ার বিজকে বলেন, শেয়ারের দর বাড়ার সঙ্গে কোম্পানির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উৎপাদন বন্ধ নয়, আমরা এখন সাবকন্ট্রাক্টে কাজ করছি।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে শূন্য দশমিক ০১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি শূন্য দশমিক ০১ পয়সা লোকসান হয়েছিল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর  কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১১ টাকা ৮৬ পয়সা।  আগের হিসাব বছর শেষে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১১ টাকা ৮৭ পয়সায়।

সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২০২৩ হিসাব বছরে আগের বছরের চেয়ে লোকসান কমলেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬ পয়সা, আগের হিসাব বছরে এ লোকসান ছিল ১৮ পয়সা।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাজারে কারসাজি অনেক আগে থেকেই হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে যারা অভিজ্ঞ তারা তাদের লাভ তুলতে সক্ষম হলেও লোকসান গোনে অনভিজ্ঞরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উচিত এমন কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

এর আগে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করলেও লোকসানের কারণে ২০২০-২১ বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। এছাড়া ২০২০ হিসাব বছরে ২ শতাংশ নগদ, ২০১৮ হিসাব বছরে ২ শতাংশ নগদ, ২০১৭ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ বোনাস, ২০১৬ হিসাব বছরে ১১ শতাংশ বোনাস ও ২০১৫ হিসাব বছরে ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।

২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া খান ব্রাদার্সের কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৯৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৭। মোট শেয়ারের মাত্র ৩০ দশমিক ১৩ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে সাত দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৬২ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০