শেখ আবু তালেব : পুঁজিবাজারে কয়েক সপ্তাহ ধরেই একটানা লেনদেন কমছে। পতনের ধারায় চলছে শেয়ারদর। কমছে সূচক ও বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। পতনের ধারা থেকে বাদ পড়ছে না মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারও। ভালো মানের শেয়ারেও বিনিয়োগ ঝুঁকি দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। অথচ পুঁজিবাজারের এমন আচরণের কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। খুব শিগগিরই যে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরবে, তারও কোনো লক্ষণ দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা।
অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়মের ফাঁক গলিয়েই বাজার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। বাজারের আচরণ দেখেই ধরতে হবে কারসাজি চক্রকে। নইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) গত সপ্তাহেও চার কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে। এ সময়েও আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন কমেছে ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমায় সপ্তাহ শেষে প্রধান সূচক কমেছে এক দশমিক ১৬ শতাংশ বা ৬৪ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহের চেয়ে সূচকের এমন পতনে হতাশ হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসইর গত সপ্তাহের লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেনে মোট ৩৫২টি সিকিউরিটিজ অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪৬টির বা ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, কমেছে ১৬৯টির বা ৪৮ শতাংশ, অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টির বা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং লেনদেন হয়নি দুটি সিকিউরিটিজের শেয়ার।
তথ্য বলছে, আলোচিত সময়ে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমেছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। মৌলভিত্তির সব খাতেই পতন হয়েছে। শুধু টেলিকম খাতের শেয়ারদর ইতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করে। এ সময় খাতটির শেয়ারদর সর্বোচ্চ তিন দশমিক ২৩ শতাংশ গেইনারে অবস্থান করে। অন্যদিকে পতনের ধারায় ছিল সিমেন্ট খাতের শেয়ারদর। খাতটি সর্বোচ্চ চার দশমিক ২৬ শতাংশ লুজারে পরিণত হয়। এই সময়ে লেনদেনের সংখ্যা কমার পাশাপাশি আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৫ দশমিক সাত শতাংশ কম লেনদেন হয় ডিএসইতে। শেয়ার লেনদেন, টাকার পরিমাণ ও বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমায় গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে তিন হাজার কোটি টাকার।
খাতভিত্তিক লেনদেনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল প্রকৌশল খাতের। আলোচিত সময়ে খাতটি মোট লেনদেনের ১৬ শতাংশ অবদান রাখে। এরপরই ছিল ব্যাংক খাতের ১৩ শতাংশ অবদান। এছাড়া সিমেন্ট খাতের দুই শতাংশ, সিরামিকের চার শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১৩ শতাংশ, সাধারণ বিমার চার শতাংশ, জীবন বীমার এক শতাংশ, আইটি খাতের দুই শতাংশ, বস্ত্র খাতের আট শতাংশ, ওষুধ খাতের ১২ শতাংশ ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের তিন শতাংশ অবদান ছিল।
গত সপ্তাহে শেয়ার বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র দুটি ছিল ‘বি’ ক্যাটেগরির। বাকি আটটিই ছিল ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ার। শীর্ষে থাকা অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এরপরই শেয়ারদর বেড়েছে জেমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিক্যাল ঢিভাইসেস লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, মুন্নু সিরামিকের ১২ দশমিক ২০ শতাংশ, কে অ্যান্ড কিউয়ের ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ, গোল্ডেন হারভেস্ট সাত দশমিক ৪৬ শতাংশ।
অন্যদিকে দর হারানোর শীর্ষে ছিল সিঙ্গার বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারদর হারিয়েছে ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এরপরই এ তালিকায় থাকা ম্যারিকো বাংলাদেশ দর হারিয়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
কারণ ছাড়াই টেলিকম বাদে মৌলভিত্তির সব খাতে দরপতন
