নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, যখন কোনো শেয়ার নিয়ে জুয়াড়িদের কারসাজি হয়, তখন বিএসইসির কিছু করার থাকে না। বিএসইসি করতে পারে যখন স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে প্রতিবেদন আসে। এরপর সেই প্রতিবেদন নিয়ে তদন্ত হয়, শুনানি হয় এবং ব্যাখ্যা গ্রহণের পর আমরা জরিমানা করে থাকি। সেটা করতে করতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যায়। যতক্ষণে জরিমানা করা হয় ততক্ষণে সবকিছু শেষ হয়ে যায় বলে জানান তিনি। গতকাল সিএমজেএফ ও বিএমবিএ’র যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, কোনো শেয়ার নিয়ে ‘খেলাধুলা’ শুরু হলে আপনারা অনেকেই সেটা জানতে পারেন। এ বিষয়ে যদি আগে থেকেই সবাইকে সচেতন করে দেয়া হয় যে, কোন শেয়ার নিয়ে খেলাধুলা চলছে, তাহলে কেউ আর সেখানে যাবেন না। সচেতনভাবে জুয়াড়িদের খেলাধুলায় না গেলেই তো আর তারা সেটা করতে পারে না। সেক্ষেত্রে তো দিন শেষে বিএসইসির ওপর কোনো দোষ আসে না যে, বিএসইসি কেন কিছু করল না? এখানে বিএসইসির একার কিছু করার নেই, সবাই একসঙ্গে সচেতনভাবে কাজ করলেই সব সম্ভব বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, কতটুকু করা সম্ভব আর কতটুক করা সম্ভব নয়, সেটা টেবিলে বসলে বোঝা যায়। কারণ আমি তো একা কাজ করতে পারব না। আমাকে অনেক লোক নিয়ে কাজ করতে হয়। সে লোকগুলা যদি প্রস্তুত না থাকে, তাহলে কিছুই করা যায় না।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, আমি যখন এই সংস্থার বাইরে ছিলাম, তখন একভাবে ভাবতাম। কিন্তু যখনই এ সংস্থা এসে কাজ শুরু করলাম, তখন আবার অন্যভাবে ভাবতে হচ্ছে। বাস্তবতার নিড়িখে এখানে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সবসময় পুস্তক অনুযায়ী এখানে কাজ করলে হয় না। বাস্তব দুনিয়া ভিন্ন। আমি অনেক কিছু করতে চাই, কিন্তু আমি এখন বা আগামী দুই বছরের মধ্যে সেগুলো করতে পারব না। কারণ এখনও অনেক কিছু প্রস্তুত নেই।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আজকে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার ভালো-খারাপ সবটাই জানতে পারলাম। সামনের দিকে কাজ করতে গেলে এই বিষয়গুলো আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেবে। আসলে অর্থনৈতিক যে বিষয়টি আপনারা বিভিন্ন সময়ে তুলনা করেন, তুলনা কাদের সঙ্গে করেন, সেটা আগে দেখবেন। যেখানে মানুষ টাকা জমা রাখলে যারা সঞ্চয় করে, যারা বিনিয়োগ করে, তারা তো সেটা রিটার্নের জন্য করে, একটা অপশন থাকে তাদের হাতে। এ ছাড়া তো তারা কোথাও থেকে এক টাকাও পাবে না। দেশে-বিদেশে বিনিয়োগ অথবা নিজের দেশে ক্যাপিটাল থেকে যেদিকে পাওয়া যাবে, তারা সেদিকে যায়।
তিনি আরও বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল লিটেরেসি যদি না থাকে, তাহলে কত দূর এগোতে পারব বা কয়টা লোক নিয়ে এগোতে পারব। আমি যেখানেই ডিজিটালে কাজ করতে যাই, সেখানেই আইটিতে লোক পাই না। মার্কেটে কাজ করতে গিয়ে যখন দেখি আইটিতে লোক নেই, তাহলে এই মার্কেট প্লে করবে কারা। তাই প্রথমেই আমাদের লিটারেসি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, কোনো দরকার না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এখন আমাদের ইন্টার্নশিপ করাতে হচ্ছে। আমাদের কাছে এলেই আমরা মার্চেন্ট ব্যাংক বা মিউচুয়াল ফান্ডে পাঠিয়ে দিচ্ছি। কারণ তারা সেখানে গিয়ে একটু শিখুক। কারণ বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রথম সমস্যা হচ্ছে, এখানে এখন ক্যাপিটাল মার্কেট বোঝা লোকের সংখ্যা এত কম যে, না বুঝেও অনেকে অনেক কথা বলে ফেলছে, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আর এসব কারণেও মানুষ আমাদের ভুল বুঝছে।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ?্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমাদের বাজারে কয়টা ভালো কোম্পানি আছে? এখানে নেসলে ও ইউনিলিভারের মতো কোম্পানি আসছে না। জাঙ্ক শেয়ার দিয়ে মূলত শেয়ারবাজার চালানো হচ্ছে। আমাদের বাজারে হতাশা ও আশা দুদিকই আছে। এ বাজারে ভালো কোম্পানি আনার দরকার থাকলেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব?্যবধান কমিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এটা সরকার সঠিক পলিসি নেয়নি।
তিনি বলেন, দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো কর দেয় বেশি। এজন্য প্রণোদনা দিয়ে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। ১০ শতাংশ গ্যাপ ছিল (তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান), সেটা সাড়ে সাত শতাংশ করা হলো। আমরা যেখানে ১৫ শতাংশ গ্যাপ চেয়েছি, কিন্তু মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ গ্যাপ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এনবিআর’র মোট ট্যাক্সের ৮০ শতাংশ আসে তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে। সুতরাং এনবিআর’র প্রচেষ্টা থাকা উচিত বেশি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনা। কোম্পানি কখন লিস্টিংয়ে আসবে? যখন তাদের লাভ হবে।
আবু আহমেদ বলেন, বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে নেসলে আছে, ইউনিলিভার আছে। আমার এখানে নেই কেন? ১৭ কোটি মানুষ, এ দেশের মানুষকে অজ্ঞ, মূর্খ মনে করে তারা? পাবলিক ইন্টারেস্টে কি না করা যায়? মেটলাইফে লাইন ধরে মানুষ টাকা জমা দিচ্ছে। কিন্তু তারা লিস্টেট নয়। কেন? কেউ কি প্রশ্ন করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, অধ্যাপক খায়রুল হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, এএএমসিএমএফ, আইসিএবি, আইসিএমএবি ও আইসিএসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।