কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে ডলার নেয়া বেড়েছে

রোহান রাজিব: ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে ডলার নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহক বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করেছে ২ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৬৬ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। গত বছরের প্রথম আট মাসে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের খোলাবাজারে গত কয়েক মাস ধরে ডলার সংকট চলছে। ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার কাজেও অনেকে বিদেশে ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারা কার্ডে ডলার এনডোর্সমেন্ট করে নিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে কার্ডের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা ও ডলারের লেনদেন বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টে ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে ৩৬ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৩৮ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এ হিসাবে জুলাইয়ের চেয়ে আগস্টে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। আগস্টে স্থানীয় মুদ্রায় কার্ডে ৩৬ হাজার ৩৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বৈদেশিক মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫২০ কোটি টাকা টাকা। স্থানীয় মুদ্রায় আগস্টে লেনদেন কমলেও ডলারে বেড়েছে।

দেশে অনেক আগেই ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদন দেয়া হয়। পরে ২০২০ সালের জুনে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের হিসাবের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ডেবিট কার্ড ইস্যুর অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দ্বৈত মুদ্রার এসব কার্ড দিয়ে দেশে বসে বিদেশের হোটেল বুকিং, নির্দিষ্ট পরিমাণের কেনাকাটাসহ নানা খরচ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশে যাওয়ার সময়ও অনেকে কার্ডেই বৈদেশিক মুদ্রা এনডোর্সমেন্ট করে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কার্ডে বছরে খরচ করা যাবে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার। গ্রাহকদের কাছে নগদে ও কার্ডে দু’ভাবেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংক। এতদিন নগদের চেয়ে কার্ডে ডলার নেয়ার খরচ ছিল কম। তবে সম্প্রতি বাফেদা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কার্ডের ডলারের বিনিময় মূল্য হবে নগদ ডলারের মতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন চলতি বছরের প্রথম মাস থেকে টানা বাড়ছে। জানুয়ারিতে ২১৯, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৬, মার্চে ২৮০, এপ্রিল ২৪১, মে ৩৫৮, জুন ৩৯৯, জুলাই ৪৪০ ও আগস্টে ৫২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা মোট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ৪২৯টিতে। এর মধ্যে ডেবিট কার্ড ২ কোটি ৮৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৪টি। ক্রেডিট কার্ড ২০ লাখ ২২ হাজার ২৫৯ ও প্রিপেইড কার্ড রয়েছে ২৯ লাখ ২৫ হাজার ৫৭৬টি। সংখ্যার মতো কার্ড লেনদেনের সিংহভাগই হয় ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে।

গত আগস্টে ডেবিট কার্ডে ৩৩ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২ হাজার ৩০২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। প্রি-পেইড কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা।

কার্ডের মাধ্যমে ডলারের লেনদেন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে ডলার ডিমান্ড সাপ্লাইয়ে অসমন্বয় রয়েছে। তাই মানুষ নগদ ডলার না পেয়ে বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য কার্ডের মাধ্যমে ডলার লেনদেন করছে। তাই কার্ডের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে ডলারে লেনদেন বেড়েছে।

দেশে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ডলার বিক্রিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েও ডলারের দামের অস্থিরতা থামাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ডলারের বিপরীতে ক্রমশ মান হারাচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। সর্বশেষ গত বুধবার আন্তঃব্যাংকে সর্বনি¤œ ১০৪ টাকা ৭৬ পয়সা ও সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা ৬৬ পয়সা দরে ডলার বিক্রি হয়। এর আগের দিন মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংকে সর্বনি¤œ ১০০ টাকা ১০ পয়সা ও সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে ৯৭ টাকায়। গতকাল কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ১৩ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটি ডলারে। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকার মতো উঠে এসেছে। গত অর্থবছর ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ওঠা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। গতকাল দিনের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছিল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০