কার্ডে লেনদেন বাড়লেও মোবাইলে কমেছে

রোহান রাজিব: কার্ডের লেনদেন বেড়েছে। তবে জুলাই মাসে কমেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন। জুন মাসের চেয়ে জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকা লেনদেন কম করেছেন গ্রাহকরা। তবে এ সময়ে বেড়েছে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের অঙ্ক। আগের মাসের চেয়ে জুলাইয়ে কার্ডে লেনদেন বেড়েছে ৭৪৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পবিত্র ঈদুল আজহার সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মানুষ বেশি লেনদেন করেছেন। তাই জুন মাসে লেনদেনের হার ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। কারণ এ সময়ে মানুষ কেনাকাটা বেশি করে থাকেন। ঈদ-পরবর্তী অর্থাৎ জুলাই মাসে মানুষের কেনাকাটা কমতে থাকে। এছাড়া প্রবাসী পাঠানো আয় কমে যায়। সব মিলিয়ে জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কম হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরে জুলাই মাসে লেনদেন হয়েছে ৮৯ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা; যা আগের মাস জুুন থেকে ৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকা কম বা ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জুনে লেনদেন হয়েছে ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।

টাকা জমা, টাকা উত্তোলন, স্থানান্তর, পরিশোধ, বিল পরিশোধÑসবকিছু মিলেই হিসাব হয় লেনদেনের।

এমএফএসের লেনদেন কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম শেয়ার বিজকে বলেন, ঈদ-পরবর্তী সময়ে লেনদেন কমে যায়, এটা সাধারণ একটা ব্যাপার। কারণ সবসময় ঈদের আগের মাস (জুন) লেনদেনের পরিমাণ বেশি হয়। এ সময় মানুষ কেনাকাটা বেশি করেন, বেতন-বোনাস হয়। এছাড়া প্রবাসীরা পরিবারের জন্য বেশি টাকা পাঠান। এজন্য ঈদের আগের মাস লেনদেন বেশি হয় এবং ঈদের পর স্বাভাবিকভাবে এসব কার্যক্রম কমে যায়। ফলে লেনদেনটা কমে যায়। প্রতি বছর ঈদের পরবর্তী সময়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

বিকাশ, রকেট, নগদ, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুলাই শেষে এ খাতে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ কোটি ৪৩ লাখ ২৬ হাজার ১৬ এবং মহিলা গ্রাহক সাত কোটি ৬৪ লাখ ৯ হাজার ৪৯০ জন। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ২৬ হাজার ২৩৯।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ এবং মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে। রাজধানী ও জেলা শহরে

গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন অর্থাৎ টাকা পাঠানো হয়েছে ২৫ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে ক্যাশ আউট ২৬ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২৪ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ৩ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার ১ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটার ২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়।

লেনদেন উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা ও ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা করতে পারেন।

এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের অঙ্ক কমলেও কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে। জুলাই মাসে গ্রাহকরা কার্ডের মাধ্যমে ৩৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা লেনদেন করেছে; যা জুন মাসে ছিল ৩৭ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৭৪৬ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা মোট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৮৬ হাজার। এর মধ্যে ডেবিট কার্ড ২ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার। ক্রেডিট কার্ড ২০ লাখ ৭ হাজার এবং প্রিপেইড কার্ড রয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার। সংখ্যার মতো কার্ড লেনদেনের সিংহভাগই হয় ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে।

গেল জুলাই মাসে ডেবিট কার্ডে ৩৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আর প্রি-পেইড কার্ডে লেনদেন হয় ২৯১ কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০