Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 10:46 pm

কার্বন নিঃসরণে ট্রাম্পের নীতি মার্কিন গাড়িশিল্পের জন্য হুমকি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভবিষ্যতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। আর চীন এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি দেখাচ্ছে। তাই বলা যায়, ভবিষ্যতে এসব গাড়ি তৈরিতে চীন নেতৃত্ব দেবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্বন নিঃসরণ বিষয়ে শিথিলতার নীতিতে মার্কিন গাড়িশিল্প হুমকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউন। খবর বিবিসি।

এক সাক্ষাৎকারে জেরি ব্রাউন বলেন, ‘এ মুহূর্তে বৈদ্যুতিক গাড়ি খাতে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। পাশাপাশি এসব গাড়ি কেনাবেচাতে কেন্দ্রীয় সরকারের উৎসাহ দেওয়া দরকার। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন গাড়িনির্মাতারা ‘অর্ধঘুমন্ত’। তারা ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জকে অনুধাবন করতে পারছেন না। এটি যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

তিনি বলেন, ‘চীন কার্বন নিঃসরণ কমাতে ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটি বায়ুচালিত টারবাইনসহ বিভিন্ন  মাধ্যমে নাবায়ণযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে। তারা ব্যাটারি প্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিক গাড়ি খাতে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি তারা এ-সংক্রান্ত এমন নীতি নিয়েছে, যাতে বৈশ্বিক বাজারে তাদের অংশগ্রহণ দ্রæত হারে বাড়ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্পকে টপকাতে যাচ্ছে। আর মার্কিন গাড়িনির্মাতারা ঘুমাচ্ছে। তাদের ঘুম ভাঙা দরকার। আমি আশা করি তাদের ঘুম ভাঙবে।’

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ির ব্যবহার কমে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে মনে করছেন ব্রাউন।

গাড়ির কার্বন নিঃসরণের মান নির্ধারণে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তবে সেটা বাজার ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন রাজ্যের গভর্নর। এর জন্য কেন্দ্রীয় প্রচেষ্টা দরকার বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, কার্বন নিঃসরণের কারণে বেড়ে যাওয়া বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সীমিত রাখতে ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান’ নামের একটি পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পরিকল্পনাটি বাতিল করে ‘এনার্জি ইনডিপেনডেন্স এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ নামে নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন ট্রাম্প। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শিল্প-কারখানাগুলোকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে ট্রাম্প পরিবেশগত বিধিনিষেধ কমিয়ে আনার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার মধ্যে এ নির্বাহী আদেশকে সবচেয়ে জোরালো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক কর্মসংস্থানের ওপর ওবামার আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। এতে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শিল্পমালিকরাও খুশি হয়েছিলেন। তাদের দাবি, এ নির্বাহী আদেশ ‘কয়লার বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এবং ‘কর্মসংস্থানবিনাশী বিধিনিষেধের’ অবসান ঘটাবে।

প্রসঙ্গত, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের এ বিপন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে প্যারিসে ‘কপ ২১’ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। গত বছর নভেম্বরে ওবামা প্রশাসন ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। শুরু থেকেই প্যারিস চুক্তির বিরোধিতাকারী ট্রাম্প জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক উৎপাদন ফিরিয়ে আনায় জোর দিয়েছেন। নিশ্চিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সাপেক্ষেই তার সিদ্ধান্তে কার্বন নিঃসরণ বেড়ে যাবে। স্বভাবতই বৈশ্বিক উষ্ণতাও বাড়বে।