শেয়ার বিজ ডেস্ক: সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিনব্যাপী পরিবেশ-সংক্রান্ত ‘মিডল ইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ (এমজিআই) সামিট’। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার সৌদি পৌছেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এদিকে সম্মেলন কেন্দ্র করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সৌদি আরব। লক্ষ্য অনুযায়ী, আগামী ২০৬০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস (সিএফসি) নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশটি। খবর: আরব নিউজ, আল জাজিরা।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী ২০৬০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস (সিএফসি) নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশটি।
স্থানীয় সময় শনিবার সৌদি গ্রিন ইনিশিয়েটিভ ফোরামে দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ২৬’ অনুষ্ঠিত হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে এমন ঘোষণা দিল সৌদি আরব।
এদিকে, সৌদি আরবের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, আমি আশা করছি, মধ্যপ্রাচ্য বৈশ্বিক সবুজ উদ্যোগে যোগ দিবে। এবং ‘কপ-২৬’ এর অঙ্গীকার অনুযায়ী, কার্বন নির্গমন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নিয়ে আসবে।
নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী, দেশটি বৈশ্বিক চেষ্টার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে দৈনিক ২৭৮ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করবে। একই সঙ্গে মিথেন গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথাও জানিয়েছে।
তবে শুধু নিজ দেশের মধ্যেই কার্বন নিঃসরণের কথা বলছে তারা। তেল ও গ্যাসে দেশটি বিনিয়োগ কমাবে কিনা, অথবা জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন থেকে কীভাবে সরে আসবে সে ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি।
এখনও সৌদি আরবের অর্থনীতির প্রধান উৎস হচ্ছে জ্বালানি রপ্তানি। যদিও বিশ্ব এখন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার চেষ্টা করছে। দেশটি চলতি বছর শুধু তেল থেকে ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয় করার পূর্বাভাস দিয়েছে।
শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ কোটি গাছ লাগানো এবং পতিত ভূমির বিশাল অংশে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স সালমান। যার মাধ্যমে ২০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হবে এবং রাজধানী রিয়াদ আরও বেশি টেকসই হবে।
এর আগে রাশিয়া এবং চীনও ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। এখন সে তালিকায় নাম লেখালো শীর্ষ জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশটি। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সৌদি আরব বিশ্বের দূষণকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে। জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬-এর সভাপতি অলোক শর্মা সৌদির এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ব্ল– হাইড্রোজেন প্রকল্পে ১১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ: সম্মেলনের আগেরদিন গতকাল সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী আবদুল আজিজ বিন সালমান বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ‘বড় প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে সৌদি সরকার। যেখান থেকে পরিবেশবান্ধব সবুজ জ্বালানি আসবে। তিনি বলেন, কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার জন্য (ব্ল– হাইড্রোজেন) এ প্রকল্পে ১১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। যেখান থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসকে রূপান্তরিত করে কার্বন নির্গমন কমিয়ে সবুজ জ্বালানি তৈরি করবে।
প্রকল্পের আওতায় দেশটির জাফুরা অঞ্চলে ২০০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হবে, যা ২০২৪ সাল থেকে উৎপাদনে যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আমর্কো। যেখানে ২০২৫ সাল নাগাদ ৭০০ বিলিয়ন ডলার আয় হবে।
তিন দিনের সৌদি সফরে ইমরান খান: এদিকে এমজিআই সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে গেছেন ইমরান খান। সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের আমন্ত্রণে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। যুবরাজ সালমানের উদ্যোগে এ প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।