শেয়ার বিজ ডেস্ক:নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিবছর অন্তত দুই লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। তবেই কেবল বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি আটকানো সম্ভব হবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা ও কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জি বৃহস্পতিবার তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এই তথ্য। খবর: রয়টার্স।
যদি বিশ্বের ধনী দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না করে, তাহলে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা অন্তত ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ।
গড় তাপমাত্রা এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে রীতিমতো বিশৃঙ্খলা শুরু হবে বৈশ্বিক জলবায়ুতে। বিভিন্ন দেশে ঘনঘন দেখা দেবে টানা দীর্ঘ তাপপ্রবাহ, খরা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবর্ষণ ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এছাড়া বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেলে দুই মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রাও বাড়বে। ফলে লাখ লাখ বছর ধরে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে জমাট বেঁধে থাকা বিপুল বরফ গলতে শুরু করবে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বের নিচু অঞ্চলে থাকা বিভিন্ন দেশ ও জনবসতি সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ দিন দিন কয়লা ও জ্বালানি তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অতিমাত্রায় বৃদ্ধি। এসব জ্বালানি পোড়ার ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের উপস্থিতি বৃদ্ধি করে। দিনের পর দিন ধরে যদি বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি বাড়তে থাকে, তাহলে প্রতিদিন সূর্য থেকে যে তাপ পৃথিবীতে আসে, তা প্রতিফলনের মাধ্যমে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা একসময় কমে যাবে পৃথিবীর। ফলে বাড়তে থাকবে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা।
ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে পৃথিবী যন্ত্রসভ্যতা বা শিল্পযুগে প্রবেশ করে। বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠতে থাকে বড় বড় শহর, শিল্পকারখানা ও মোটরযান। জলবায়ুবিদদের মতে, যন্ত্রসভ্যতা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৭০ বছরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছি এক ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি।
‘নেট জিরো এমিশন’ বলতে বোঝানো হয় বিশ্বের প্রতিদিনের কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে নিয়ে আসা। যদি এই ব্যাপারটি ঘটে, সেক্ষেত্রে বিশ্বের বনাঞ্চল ও সাগর-মহাসাগরগুলোর জন্য বাতাস থকে কার্বন শুষে নেয়া অনেক সহজ হবে।
আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির বেশি বাড়তে না দিতে কয়েক বছর আগে চুক্তি করেছে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলো। কিন্তু তারপর এ বিষয়ে তেমন কোনো দৃশ্যমান গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক পদক্ষেপ আর দেখা যায়নি।
উড ম্যাকেঞ্জির মতে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি বৃদ্ধির একটি বড় কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। তাই ‘নেট জিরো কার্বন এমিশন’ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে প্রথমে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ খাতকে পরিবেশবান্ধব করতে হবে। তারপর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে কমিয়ে আনতে হবে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা। আর এজন্য প্রতি বছর প্রয়োজন হবে দুই লাখ ৭০ হাজার ডলার।
‘বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা খুবই কঠিন, তবে প্রয়োজনীয় অর্থ
বিনিয়োগ করা হলে এই লক্ষ্য অর্জন একেবারে অসম্ভব নয়,’ নিজেদের প্রতিবেদনে বলেছে উড ম্যাকেঞ্জি।
উডম্যাকের চেয়ারম্যান এবং প্রধান বিশ্লেষক সিমন ফ্লাওয়ারস বলেন, ‘১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে চলতি দশকে আমরা কী সিদ্ধান্ত নেব, তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কি না।’
নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন সৌরশক্তিকে বিশ্বের প্রয়োজনীয় শক্তির অন্যতম উৎস হিসেবে ব্যবহারের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে উডম্যাকের গবেষণায়, পাশাপাশি পরিবহন খাতকে বিদ্যুতায়িতকরণ ও হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহারও বাড়ানোর প্রতি জোর দেয়া হয়েছে।