Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:54 am

কালাইয়ে কিডনি বেচাকেনা চক্রের সাত দালাল গ্রেপ্তার

এটিএম সেলিম সরোয়ার, জয়পুরহাট : প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কঠোর নজরদারিতে কিছু সময় ঝিমিয়ে পড়েছিল জয়পুরহাটের সেই আলোচিত কালাই উপজেলার কিডনি বেচা-কেনার হাট। বর্তমানে নতুন নতুন দালালের তৎপরতায় আবারও চাঙা হয়ে উঠেছে সেই হাট। কিডনির হাট চাঙা হওয়ায় নতুন করে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে জয়পুরহাটের কালাই ও পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে কিডনি বেচাকেনা চক্রের সঙ্গে জড়িত সাত দালাল সদস্যকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ। গতকাল শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে কিডনি বেচাকেনা চক্রের দালাল সদস্যদের গ্রেপ্তারের বিষয় নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মদ ভূঞা।

আটককৃত দালাল চক্রের সদস্যরা হলেনÑকালাই উপজেলার থল গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে সাহারুল ইসলাম (৩৮), একই উপজেলার উলিপুর গ্রামের ফরিদুল ইসলামের ছেলে ফরহাদ হোসেন ওরফে চপল (৩১), জয়পুর বহুতি গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে মোশারফ হোসেন (৫৪), ভেরেন্ডি গ্রামের জাহান আলীর ছেলে শাহারুল ইসলাম (৩৫), জয়পুর বহুতি গ্রামের মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে মোকাররম হোসেন (৫৩), দুর্গাপুর গ্রামের মৃত বছির উদ্দিন ফকিরের ছেলে সাইদুল ইসলাম ফকির (৪৫) এবং পাঁচবিবি উপজেলার গোড়না আবাসনের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৪০)।   

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মদ ভূয়া জানান, অবৈধভাবে কিডনি বেচাকেনা বন্ধ করতে শুক্রবার দিবাগত রাতে জয়পুরহাটের কালাই ও পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে নতুন ও পুরোনো মিলে মোট সাত দালাল সদস্যকে আটক করা হয়েছে। আটক দালালরা দীর্ঘদিন ধরে জয়পুরহাট জেলাসহ পার্শ^বর্তী নওগাঁ, গাইবান্ধা ও দিনাজপুর এলাকার নিরীহ, ঋণগ্রস্ত ও হতদরিদ্র মানুষদের ফুসলিয়ে টাকার লোভ এবং অল্প সময়ে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে নারী ও পুরুষদের কিডনি বিক্রি করে আসছিলেন। এসব নিরীহ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দালালদের খপ্পরে পরে প্রথমে চার-পাঁচ লাখ টাকায় চুক্তিতে তাদের মূল্যবান কিডনি বিক্রি করে দেন। ভারত ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে তাদের কিডনি দিয়ে নামমাত্র চিকিৎসা নিয়ে যখন দেশে ফেরেন, তখন দালালরা বিমাবন্দরেই তাদের হাতে দু-এক লাখ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে বিদায় করেন। পরে কিডনি দাতারা নিজের অঙ্গ বিক্রি করে ঝুঁকি নিয়ে জীবন অতিবাহিত করলেও লাভবান হচ্ছে এসব দালাল। আবার নিজের কিডনি বিক্রি করে প্রতারিত হয়ে নতুন করে দালাল বনে যাচ্ছে এসব কিডনিদাতারা।

তিনি আরও বলেন, আটক দালালরা কিডনি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে স্বীকার করেছেন। কিডনি বেচাকেনা প্রতিরোধে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। অল্প সময়ের মধ্যে অবৈধভাবে কিডনি বিক্রি শতভাগ বন্ধ করা না গেলেও অনেকটাই বন্ধ করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফারজানা হোসেন, সদর সার্কেল মোসফেকুর রহমান, পাঁচবিবি সার্কেল ইশতিয়াক আলমসহ পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।