কালীগঞ্জে দেশি-বিদেশি ফল চাষে সফল সুরত আলী

গুটিকয়েক ফসল চাষাবাদের বৃত্ত ভেঙে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার যে কজন চাষি ঝুঁকি নিয়ে চাষ শুরু করেছেন সুরত আলী তাদের একজন। দেশের আবহাওয়া ও মাটিতে বিদেশি ফসল চাষে লোকসানের আশঙ্কা থাকলেও গাছে ফল আসতে শুরু করায় হতাশা কাটিয়ে আশার আলো দেখছেন তিনি। ইতোমধ্যে চারা বিক্রির মাধ্যমে আয় শুরু হয়েছে তার। ফল বিক্রি করে এ বছরই লগ্নি করা টাকার অর্ধেক উঠে আসবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
সুরত আলী জানান, প্রায় ১২ একর জমিতে বিদেশি বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করেন। এর মধ্যে তিন একর জমি নিজের, বাকিগুলো লিজ নেওয়া। বিঘা (৩৩ শতাংশ) প্রতি বছরে ১০ হাজার টাকা করে ৯ একর জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে এই কৃষি খামারটি গড়ে তুলেছেন তিনি।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার শিবনগর দাসপাড়ার মাঠে কৃষি খামারটি। খামার ড্রাগন, আম, লিচু, পেয়ারা, খেজুর, লটকন, নারিকেল, রামবুটান প্রভৃতি ফলের বিভিন্ন জাতের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ ধরনের ড্রাগনসহ হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, মোজাফফর লিচু, টিস্যুকালচার খোরমা খেজুর, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের পেয়ারা, সিডলেস পেয়ারা ও টিস্যুকালসার নারিকেল গাছ রয়েছে।
সুরত আলী জানান, দেশি ফল চাষে খরচ কম। স্বল্পসময়ে খরচের টাকা উঠিয়ে লাভের মুখ দেখা যায়। কিন্তু বিদেশি ফল চাষে সময় লাগে বেশি, খরচও বেশি। তবে ঝুঁকি নিয়ে চাষ শুরু করেন তিনি। গাছে ফল আসতে শুরু করায় এখন তিনি আশাবাদী। এ-জাতীয় ফলের চাষ শুরু করতে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তারই ভাগ্নে কৃষিবিদ ড. রুস্তম আলী। ড. রুস্তম ঢাকার একটি নার্সারি থেকে বিদেশি জাতের এ ফলের চারা তাকে সরবরাহ করেন। ব্যতিক্রমী এ ফলের চাষ সম্পর্কিত সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ তিনিই দিচ্ছেন। রুস্তম আলীর আর্থিক সহযোগিতা ও কৃষি পরামর্শে তার এ খামার এখন লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
ড্রাগন চাষ সম্পর্কে জানা যায়, মাত্র দেড় বছরে গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। জুলাই-আগস্টের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে। সাধরণত ফুল আসার ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় ফল পেকে যায়। একটি পরিপুষ্ট পাকা ফলের ওজন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। বছরে একাধারে প্রায় তিন থেকে চার মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। ড্রাগন গাছ একবার লাগালে ওই গাছ থেকে কমপক্ষে ১০ বছর ফল পাওয়া যায়। স্থানীয় বাজারে ড্রাগন প্রতি কেজি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। ঢাকার বাজারে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে তিনি জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল করিম জানান, বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের চাষ এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। কালীগঞ্জ উপজেলায় কয়েকজন চাষি ক্যাকটাস প্রজাতির এ ফলের চাষ শুরু করেছেন। উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ১২ একর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণ ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) ও আয়রন আছে। অধিক পুষ্টি গুণসম্পন্ন এ ফল চোখ সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি ও রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগ প্রতিরোধ করে। তিনি জানান, কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস ড্রাগনচাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে, নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় উৎপন্ন ড্রাগন ফল এখন ঢাকার বাজারের চাহিদা মেটাচ্ছে। স্থানীয় বাজারেও ড্রাগন ফলের চাহিদা বেড়েছে। তিনি জানান, প্রযুক্তি ব্যবহার করে শীতের সময়ও এ ফল পাওয়া সম্ভব। আগামী বছর উপজেলার ড্রাগনচাষিদের মাঝে প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দিয়ে অফ সিজনেও এ ফল পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। লাভজনক এ ফল চাষে কৃষক আগ্রহী হলে কৃষি অফিস তাদের সব ধরনের সহায়তা করবে বলে জানান জাহিদুল করিম।

নয়ন খন্দকার

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০