মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের পরিমিত ব্যবহার করে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শিম ও পুঁইশাক উৎপাদন করছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কুল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম পিন্টু। ইতোমধ্যে তার উৎপাদিত পণ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপণন হচ্ছে। আর ওই এলাকার কৃষকেরা তার সবজি উৎপাদনের এ পদ্ধতি অনুকরণ করছেন।
জানা যায়, আট বছর আগে নিজের দুই বিঘা জমিতে সবজি উৎপাদন শুরু করেন কৃষক সিরাজুল। প্রথমদিকে রাসায়নিক সারের ব্যাপক ব্যবহার শুরু করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তিনি সারের ব্যবহার কমিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি তিন বিঘা জমিতে শিম ও পুঁইশাক আবাদ করছেন। সবজি আবাদ করতে রাসায়নিক সারের সঠিক ব্যবহার করছেন। এতে ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন তিনি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর দুই বিঘা জমিতে শিম ও এক বিঘা জমিতে পুঁইশাক আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে এক লাখ টাকা শিম ও ৫০ হাজার টাকার পুঁইশাক বিক্রি করেছি। আমি একসময় সবজি ক্ষেতে প্রায় প্রতদিন কীটনাশকসহ রাসায়নিক সার দিতাম। এমনকি কীটনাশক স্প্রে করার পরদিনই তা তুলে বাজারে বিক্রি করতাম। কিন্তু বর্তমানে ঢাকার একটি সুপারশপের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা শিম ও পুঁইশাকে পরিমিত পরিমাণে সার ব্যবহার করছি। ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর এক সপ্তাহ পর সবজি তুলে তাদের সরবরাহ করি। এতে উৎপাদিত সবজি নিরাপদ থাকে। কীটনাশকের কার্যকারিতা থাকে না।
ঢাকায় সবজি পাঠানোর এক সপ্তাহ আগে স্প্রে বন্ধ করে দেন তিনি। ফলে অনেকটা জৈব পদ্ধতিতে ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। থাকছে না বিষের কার্যকারিতা।
সিরাজুল যে পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করছেন, তা দেশের সব জেলায় অনুসরণ করা হলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে। একই সঙ্গে লাভবান হবেন কৃষক।
কুল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন, হাসান আলী, আকবর হোসেনসহ অনেক কৃষক এখন এ পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করছেন। কৃষক সিরাজুলের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বর্তমানে তারাও চেষ্টা করছেন কীটনাশকের পরিমিত ব্যবহার করতে। আনোয়ার হোসেন বলেন, সপ্তাহে একদিন কীটনাশক দেওয়ার ফলে সবজি নিরাপদ থাকে। তাই এ সবজির চাহিদা তুলনামূলক বেশি। এ পদ্ধতিতে আবাদের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জিএম আবদুর রউফ বলেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন কৃষি নিরাপদ উপায়ে সবজি উৎপাদন করছেন। এতে ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতারা পাচ্ছেন স্বাস্থ্যসম্মত সবজি। কৃষি অধিদফতর নিয়মিত
কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ