শেয়ার বিজ ডেস্ক: কুমিল্লা নগরীর মুরাদপুরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১৭৩ বছরের জানু মিয়া মসজিদটি। প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের ধারক ও বাহক ইসলামি ঐতিহ্য, কালের সাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে আজও। খবর : বাসস
তিন গম্বুজবিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি জানু মিয়া মসজিদ নামে পরিচিত হলেও এর প্রতিষ্ঠাতা তার দাদা খান বাহাদুর আশরাফ আলী। তিনি এ এলাকার জমিদার ছিলেন। তিনি ১৮৪৯ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরে পর্যায়ক্রমে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকলে ১৯৯০ সালে এটি সম্প্রসারণ করা হয়। ৭ হাজার বর্গফুটের মসজিদটি সম্প্রসারণের পর এখন এর আয়তন ১০ হাজার বর্গফুট। মসজিদটি খান বাহাদুর আশরাফ আলী প্রতিষ্ঠা করলেও তার নাতি প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের সহচর জানে আলম চৌধুরী (জানু মিয়া) এর নামে কালের আবর্তনে পরিচিত পেয়ে যায়। তার শিল্পী সত্তার ফলেই এমনটি হয়েছে মনে করেন মসজিদটির বর্তমান মোতাওয়াল্লি প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে প্রফেসর আলী চৌধুরী বলেন, ১৮৪৯ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খান বাহাদুর আশরাফ আলী। এ প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক ইতিহাস আছে। তৎকালীন সময়ে দিল্লি থেকে কারিগর এনে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। মসজিদের ভেতরে যত নকশা রয়েছে সবগুলো দিল্লির কারিগররাই করেছেন। পরে তার ছেলে আরবে রহমান মোতাওয়াল্লি হন। তিনি যতদিন জীবত ছিলেন ততদিন তার নামে মসজিদটিকে বলা হতো। তার মৃত্যুর পর আরবে রহমানের ছেলে জানু মিয়া মোতাওয়াল্লি হলে পরে জানু মিয়া মসজিদ নামকরণ হয় এবং এটাই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে যায়। জানু মিয়ার শিল্প সাহিত্যর কারণে এটা স্থায়ী হয়। জানু মিয়ার সান্নিধ্য লাভ করেছেন জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। গান বাজনা করেছেন। দুই দুইবার কবি নজরুল ইসলাম এসেছেন এ বাড়িতে। পরে এটা একটা পরিচিতি লাভ করেছে এবং এভাবেই চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদটির ভেতরে ফার্সি ভাষায় কষ্টিপাথর দিয়ে প্রতিষ্ঠাতার নাম ও সন লিপিবদ্ধ রয়েছে। মসজিদটির ভেতরের টেরাকোটার অসাধারণ কারুকাজ এখনও পর্যন্ত সজ্জিত রয়েছে। পুরো মসজিদটি চুন আর পাথর দিয়ে নির্মিত। তৎকালীন যুগে প্রতিষ্ঠিত এ অপূর্ব মসজিদটির কারুকার্য এখনও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। মসজিদটি মেহেরাব অন্যান্য মসজিদ থেকে অনেক ভিন্ন। অন্যান্য মসজিদের মেহেরাব মসজিদের বাইরের দিকে অথচ এ মসজিদের মেহেরাব মসজিদের ভেতরের দিকে আর মসজিদের দেয়াল ৫৬ ইঞ্জি প্রস্থ যার কারণে মসজিদের মেহেরাব ভেতরের দিকে আছে। মসজিদটি ১০ হাজার বর্গফুটের এ মসজিদটির রয়েছে ৩টি গম্বুজ, ৪টি মিনার ও ৩৬ ধরনের নকশা। মসজিদটিতে একসঙ্গে ২ হাজার ৫শ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জানে আলম ছিলেন তৎকালীন সময়ের একনিষ্ঠ সংগীত-সাধক। মসজিদের পাশে রয়েছে জানে আলমের বাসভবন। উপমহাদেশের অনেক প্রখ্যাত সংগীতশিল্পীর মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শচীন দেববর্মণসহ উপমহাদেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা ও তার সান্নিধ্যে বাসভবনে গানের আসর জমিয়েছেন। যার কারণে ওই স্থানে বিভিন্ন মানুষের আনাগোনা ছিল। যে জন্য ‘আশরাফিয়া জামে মসজিদ’ জানু মিয়া মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে।