জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিতে সাধারণ ক্ষমা অপ্রত্যাশিত ও অশোভনীয়। গতকাল রোববার সকালে আগারগাঁওয়ে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ অবশ্যই দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে, সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে। আমি যখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ছিলাম, তখন ব্যক্তিগতভাবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলাম। দেশের একজন নাগরিকের জন্য এটা মোটেও ভালো অভ্যাস নয়Ñমন্তব্য করে আবদুর রহমান খান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তা বাতিল করা হতে পারে। এ মুহূর্তে চূড়ান্ত কিছু বলতে পারছি না।
চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে যারা লুটপাট ও অর্থ পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি এনবিআর কর্মকর্তাদের দুর্নীতি শক্ত হাতে দমন করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট কাজে লাগিয়ে এনবিআর সংস্কার করা হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ছোট-বড় সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্বৃত্ত যাতে তৈরি না হয় সে ব্যবস্থাও নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল করতে আইনগুলো শিগগিরই আধুনিকায়ন করা হবে। রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে ব্যবসার যে ক্ষতি না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, অর্থ পাচার নিয়ে বিএফআইইউ কাজ করছে, এনবিআরের সিআইসিও কাজ করবে। যখনই কোনো ইঙ্গিত পাব, তা অনুসন্ধান করা হবে।
তিনি বলেন, এনবিআরে কোনো দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না, কোনো দুর্বৃত্ত যেন তৈরি না হয় সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের সুযোগ, এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। যেখানে যা করা দরকার, সেখানে আমাদের সেটা করতে হবে। সবচেয়ে বেশি ফোকাস পাবে এনবিআরে এ ধরনের দুর্বৃত্ত যেন তৈরি না হয় তার দিকে। সে বিষয়ে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে, সেটাই বেশি জরুরি। এরকম যেন আর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি না হয়।
তিনি বলেন, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগ নিয়ে টাস্কফোর্স করা হবে। সেখানে যেকোনো পর্যায় থেকে অংশগ্রহণ ও কাজ করতে হবে। অন্যায়, অবিচার যেগুলো ধরা পড়বে বা যেগুলোর ইঙ্গিত আসবে, প্রত্যেকটাই অত্যন্ত শক্ত হাতে দেখব। খুব কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ জায়গায় কোনো ব্যত্যয় হবে না। তবে ধীরে ধীরে সব হবে। দুর্নীতিবাজদের খুব শক্ত বার্তা দেয়া হয়েছে। যদি তারা নিজেদের পরিবর্তন করতে না পারে তাহলে তারা থাকবে না। আইনের বাইরে যাব নাÑমন্তব্য করে নতুন চেয়ারম্যান বলেন, একজন ব্যক্তি বলল সব হয়ে গেল। আইনকানুন এক পাশে রেখে এভাবে হবে না। আমরা নিয়ম অনুযায়ী চলব। নিয়ম না থাকলে, নিয়ম বানাব। কিন্তু নিয়ম বা আইনের বাইরে যাব না।
অর্থ পাচার রোধে এনবিআর কাজ শুরু করছে জানিয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা স্ট্রংলি এটা দেখছি। তবে একটু সময় দিতে হবে। আমরা এখনই একেবারে হুড়মুড় করে পড়ব না। নীতিগত সমস্যার কারণে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ পাওয়া যায়নি, এখানে পরিবর্তন আনতে হবে। এনবিআরের নেতিবাচক ইমেজ আছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের যেই স্পিরিট, দুর্নীতি মুক্ত ও বৈষম্য মুক্ত সমাজ গড়া, এটা আমাদের ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ইমেজ সংকট রয়েছে যে আমরা তথ্য ঠিকভাবে সংগ্রহ করতে পারি না; যা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অডিট অধিদপ্তরের সঙ্গে গরমিল দেখা যায়। এখন থেকে এ বৈষম্য দূর করা হবে।
আইবাস থেকে তথ্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এখন থেকে সমন্বিত তথ্য পরিবেশন করা হবে। রাজস্ব আহরণের একটাই ফিগার হবে। এনবিআরে সংস্কার প্রসঙ্গে নতুন চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআর অটোমেশন করা হবে, এটাই আমার মূল কাজ। টোটাল ফাংশনকে অটোমেশন করতে পারলে হিউম্যান টাচ কমাতে পারলে সবাই এর সুবিধা পাবে। আমাদের আইনে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। আইন প্রয়োগেও কিছু দুর্বলতা আছে, ঘাটতি আছে। সে কারণে আমাদের রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে, সেখানেও কাজ করতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপের আগে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়া চেয়ারম্যান আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও কর্মচারীরা পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেন। চেয়ারম্যান যৌক্তিক দাবি দ্রুত পূরণের আশ্বাস দেন।