নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে সরকার গত মাসে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে তা আর থাকছে না। যার অর্থ আগামীকাল থেকে গণপরিবহন চলবে আগের মতো, রেস্তোরাঁয় বসে খেতে থাকবে না কোনো শর্ত, উম্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশও করা যাবে।
ভাইরাস সংক্রমণের হার কমার মধ্যে গতকাল রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে নতুন করে কোনো বিধিনিষেধ বর্ধিত করা হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ১৩ জানুয়ারি ‘উš§ুক্ত স্থানে সব ধরনের জনসমাবেশ নিষেধ, রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণে টিকার সনদের বাধ্যবাধকতা, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল এবং টিকার সনদ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের বাধ্যবাধকতাসহ ১১টি বিধিনিষেধ জারি করেছিল সরকার।
আগামীকাল থেকে এসব বিধিনিষেধ উঠে গেলেও মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গত বছরের নভেম্বর থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ফলে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টির পর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশেও সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। সংক্রমণের রাশ টানতে নতুন বছরের শুরুতেই ৪ জানুয়ারি ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগমে নিরুৎসাহিত করা হয়। ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয় ১১টি বিধিনিষেধ। পরে তা ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে ২১ জানুয়ারি ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এরই মধ্যে সংক্রমণ ‘কমতে থাকায়’ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের শর্তে ১ মার্চ থেকে খুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। আগামী ১ মার্চ প্রাথমিকসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার কথাও বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবও। তিনি জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে এক কোটি মানুষকে কভিড টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১২ বছরের নিচের স্কুলশিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে। খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেই চিন্তা করছে। কারণ ক্লাস সিক্সে পড়ছে যারা, অনেক বাচ্চার বয়স ১২ বছরের নিচেও রয়েছে। তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? তাই যেসব দেশ ১২ বছরের নিচের বয়সীদের টিকা দিয়েছে, আমরা তাদের অভিজ্ঞতা নেয়ার চেষ্টা করছি।’
২০২০ সালে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু হলে মার্চের শেষ দিকে দেশজুড়ে লকডাউন জারি করা হয়, যা দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলে। সেই লকডাউনে জরুরি সেবার পরিবহন এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যে কারও চলাচল ছিল বারণ। সব অফিস-আদালতের পাশাপাশি কলকারখানাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরিস্থিতির উন্নতিতে পরে সেই বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। ডেল্টা সংক্রমণের পর গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট অবধি বিভিন্ন সময় লকডাউনের বিধিনিষেধ ছিল। বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ। এরপর সংক্রমণের হার দ্রুত কমে এলে গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলে; জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে ওমিক্রনের কারণে গত মাসে স্কুল-কলেজ বন্ধ করাসহ ফের পুরোনো বিধিনিষেধগুলো ফিরেছিল।