রবিঠাকুর তার শরৎ কবিতায় লিখেছিলেন আজি কি তোমার মধুর মুরতি, হেরিনু শারদ প্রভাতে! হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ ঝুলিছে অমল শোভাতে। পারে না বহিতে নদী জলধার, মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর, ডাকিছে দোয়েল, গাহিছে কোয়েল, তোমার কাননসভাতে! মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী, শরৎকালের প্রভাতে।
এমন কবিতার পঙ্ক্তিমালায় কার মন না ছুঁয়ে যায়? শরৎ মানে মনের কোণে নাড়া দেয় ফুটন্ত কাশফুলের কথা। শরৎ মানেই নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, শান্ত বাতাস।
বৈচিত্র্যময় ঋতুর দেশ আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশ। এখানে প্রতিটি ঋতু আসে ভিন্ন রূপে। ঠিক তেমনি ঋতুভেদে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশ যেন নতুন আবেশে সাজে। সৌন্দর্যের লীলাভূমি মতিহারের এ ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায় শরতে কাশফুলের দেখা পাওয়া যায়, যা এলাকাটিকে দিয়েছে অনন্য সৌন্দর্যের ছোঁয়া। প্রকৃতির এ অপরূপ শোভা যে কাউকে বিমোহিত করে।
শরতের পড়ন্ত বিকালের আবেশ ছড়ানো রোদ সত্যিই মনকাড়া। দূর আকাশে মেঘের ভেলা, কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি! এ যেন রৌদ্র-মেঘের লুকোচুরি খেলা আর শুভ্র কাশফুলের যৌবনের উম্মাদনার এমন দৃশ্য কার না ভালো লাগে? বিশেষ করে এ দৃশ্য তরুণ মনে এক শিহরণের সৃষ্টি করে। তাইতো প্রিয় মানুষের সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে শরতের পড়ন্ত বিকালে ঘুরতে দেখা যায় শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির মানুষকে। বিকালের হালকা বাতাসে দোলা কাশফুল দেখে মনে হবে এ যেন প্রকৃতি বাংলার প্রতিচ্ছবি। শরতের নীল আকাশে কাচের মতো স্বচ্ছ গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘের অবিরাম ছুটে চলার দৃশ্য কবি মনের মতো মাতিয়ে তোলে সবাইকে।
শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক! শিউলি ফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশ, মায়াবী জ্যোৎস্না, শুভ্র কাশফুল যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশের মাঠে-ঘাটে কাশফুলের দেখা মেলে। গত বুধবার বিকালে শরতের অন্যতন আকর্ষণ এই কাশফুলের মাঝে কিছু সময় কাটাতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়াংকা পারভীন পিংকি ও তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, শরৎ মানেই কাশফুলের সঙ্গে মিতালি। আমরা অপেক্ষা করি শরতের জন্য। দল বেঁধে এভাবে এমন সৌন্দর্য অনুভব করার মাঝে রোমান্টিকতার ছোঁয়া পাই। এ অনুভূতিকে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। সাদা মেঘের সঙ্গে নীলাকাশ ও কাশফুল একত্রে দেখা যেন অন্যরকম এক পাওয়া।
আসিফ হাসান রাজু