Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:48 pm

কাশ্মীরি শালের গল্প

 

কাশ্মীরি শাল বা চাদর। অনেকদিন ধরে শীতে অভিজাতদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এ শাল। বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউ মার্কেট, মৌচাকসহ অনেক জায়গায় রয়েছে কাশ্মীরি শালের দোকান। সাধারণত এসব জায়গার দোকানিরা কলকাতা থেকে আমদানি করেন ওইসব শাল বা চাদর। হয়তো এ কারণে দেশি ক্রেতাদের অনেকেই আস্থা পান না তাদের পণ্যের ওপর। প্রায় সবাই খুঁজে বেড়ান এক প্রস্থ আসল কাশ্মীরি শাল।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়ও শতাধিক ছোট-বড় প্যাভিলিয়নে বিক্রি হচ্ছে কাশ্মীরি শাল। এর মধ্যে আসল শাল চেনার উপায় কী? দামই বা কত? তার আগে একটু জেনে নেওয়া যাক কাশ্মীরি শালের এত জনপ্রিয়তার হেতু কী? জানা যায়, প্রাচীনকালে এশিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিমে পণ্য সরবরাহের জন্য সিল্করুট চালু ছিল। কাশ্মীর এ রুটের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। সে সময় থেকেই কাশ্মীরিরা ব্যবসা-বাণিজ্যে সুপরিচিত। জানা যায়, চতুর্দশ শতকে মধ্য এশিয়া ও ইরান থেকে প্রায় সাতশ বুনন শিল্পী কাশ্মীরে এসে চাদর শিল্প গড়ে তোলেন। একজন দরবেশ তাদের নিয়ে এসেছিলেন।

প্রচলিত আছে, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী জোসেফাইনকেও উপহার দিতেন কাশ্মীরি শাল। সম্রাজ্ঞী ওই শাল গায়ে জড়িয়ে ফ্যাশন শোতে অংশ নিতেন। একবার নেপোলিয়ন তার বান্ধবীকে চাঁদের আলোয় উম্মুক্ত দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি তার বান্ধবীর গায়ের চাদরটি ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন। এরপর তার বান্ধবী আরেকটা নতুন শাল গায়ে জড়ান। সেটি ছাড়িয়ে নেওয়ার পর আরেকটা। এভাবে চাদর ছাড়িয়ে নিতে আর নতুন চাদর গায়ে জড়াতে জড়াতে সূর্যোদয় হয়েছিল। তবে নেপোলিয়নের স্ত্রীর কাছে সংরক্ষিত কাশ্মীরি শাল শেষ হয়নি। এতে ধারণা করা যায়, ইউরোপেও কাশ্মীরি শাল রফতানি হতো।

কাশ্মীরের বিখ্যাত এ শালের নাম

পোশমিনা। ভেড়া ও বকরির পশম দিয়ে তৈরি হয় এর সুতা। হাতে তৈরি বিশেষ লুম দিয়ে বোনা হয়। একেকটি শাল এতই মিহি যে, তা আংটির ভেতর দিয়ে পার করা যেত। এ যেন ঠিক ঢাকার মসলিনেরই কাশ্মীরি সংস্করণ। ইউরোপে জনপ্রিয় কাশ্মীরি শালের অপর মডেল হলো ‘কানি’ শাল। এটি বুননের জন্য ‘রাফগারি নিডল’ নামে এক ধরনের বিশেষ সুঁই ব্যবহৃত হতো। ব্রিটিশ আমলে কাশ্মীরি শাল বুননের কাজে জড়িত শ্রমিকরা ব্যাপক শোষণের শিকার হয়েছিল।

এখনও শাল তৈরি হয় কাশ্মীরে। খাঁটি পোশমিনার দাম এখন ১০ হাজার রুপি বা তার বেশি। ঢাকার বাণিজ্যমেলায় সেই খাঁটি পোশমিনার দেখা মেলা ভার। এখানে দু-একটি স্টলে সেমি-পোশমিনা পাওয়া যাচ্ছে। দাম তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এগুলো বোনা হয় পোশমিনা সুতার উচ্ছিষ্ট থেকে। কানি শালও পাওয়া যাচ্ছে বাণিজ্যমেলায়। এর দাম ঢাকার বাজারে চার হাজার টাকার কাছাকাছি। এখনকার বাজারে কাশ্মীরি শাল হিসেবে যেগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেগুলো মূলত উলের তৈরি।

উলের তৈরি শালগুলোও কাশ্মীরে বোনা হয়। তবে এগুলোর দাম তুলনামূলক কম। এ শালগুলোর কাপড়ের দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। এগুলোর ওপর সুইয়ের সাহায্যে হাতে বোনা হয় নানা রকম নকশা। ওই নকশার কারণে উলের শালের দাম বাড়তে পারে। প্রায় সব দোকানেই দেখা যাবে শালের পুরো জমিনজুড়ে নিপুণ হাতের কাজ। একেকজন কাশ্মীরি নারীকর্মীকে একটি শালের ওপর নকশা সেলাই করার জন্য দেওয়া হয় ৩০০ থেকে ৫০০ রুপি। কাপড় ও নকশার পরিমাণভেদে শালগুলোর দাম কমবেশি হয়।

বাণিজ্যমেলায় ঘুরে দেখা গেছে, এবার কাশ্মীর থেকে ৭০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভারতীয় প্যাভিলিয়নগুলোতে স্টল দিয়েছে। মেলায় অংশ নেওয়া জম্মু-কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য নাজির আহমেদ বলেন, নানা মানের কাশ্মীরি শাল প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য মেলায় অংশ নিয়েছেন অনেক কাশ্মীরি ব্যবসায়ী।

তাদের কাছে হাতে বোনা খাঁটি কাশ্মীরি পণ্য আছে। মোহাম্মদ ওমর নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মেলা শুরুর দিকে তেমন একটা বিক্রি না হলেও শেষ দিকে এসে ভালো বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশি মেয়েরা কাশ্মীরি শালের ওপর আঁকা নকশাগুলো খুব পছন্দ করছেন।’ তবে কাশ্মীরি দোকান ছাড়াও মেলার নানা প্রান্তে দেখা গেছে প্রায় চল্লিশটি দেশি স্টলেও কাশ্মীরি শাল বিক্রি হচ্ছে। নিউ মার্কেট থেকে মেলায় অংশ নেওয়া একটি স্টলে কর্মরত বিক্রয়কর্মী বিউটি আকতার জানান, ভারত থেকেই তারা ওইসব শাল আমদানি করেছেন।