মিথ্যা ঘোষণার পণ্য

কাস্টমস গোয়েন্দা আটকালেও ছেড়ে দিয়েছে আইসিডি কাস্টম

## অ্যাসাইকুডায় লক করার পরও পণ্য ছাড়ল আইসিডি কাস্টম হাউস

## ডেলিভারি পয়েন্ট থেকে ট্রাকভর্তি পণ্য আটক করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা

## এনবিআরের হস্তক্ষেপে ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া হলেও জরিমানা আদায় করা হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক এইচএস কোডের পণ্য অন্য এইচএস কোডে শুল্কায়ন করতে দেওয়া হয় মিথ্যা ঘোষণা। মূলত শুল্ককর ফাঁকি দিতেই আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দেয়। রাজস্ব ফাঁকি রোধে অ্যাসাইকুডা সিস্টেম থেকে চালানটির খালাস স্থগিত (লক) করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। কিন্তু আইসিডি কমলাপুর কাস্টম হাউস লক করা পণ্য শুল্কায়ন করে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এর মধ্যে খবর পেয়ে খালাস পয়েন্ট থেকে সেই পণ্য আবার আটকান কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

এ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। শেষে এনবিআরের হস্তক্ষেপে ব্যাংক গ্যারান্টি রেখে পণ্য ছেড়ে দেয় আইসিডি কাস্টম হাউস। তবে মিথ্যা ঘোষণায় প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এনবিআর বলছে, আইসিডি কাস্টম হাউস আইন না মেনেই পণ্যটি খালাসের উদ্যোগ নিয়েছে, যা অনৈতিক।

এনবিআর সূত্র জানায়, তেজগাঁও পশ্চিম নাখালপাড়ার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তানাজ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি চীন থেকে সিল্ড একুমুলেটর পাওয়ার ব্যাংক কলোইডাল জেল ব্যাটারি আমদানি করে। ১৩ আগস্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসএইচ ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে পণ্য খালাসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। পণ্যটির সঠিক এইচএস কোড ৮৫০৭২০৯০ হলেও প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব ফাঁকি দিতে এইচএস কোড দেখায় ৮৫০৭৮০৯০।

এইচএস কোড ৮৫০৭২০৯০ হলে মোট শুল্ককর (টিটিআই) হয় ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর এইচএস কোড ৮৫০৭৮০৯০ হলে শুল্ককর (টিটিআই) হয় ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব ফাঁকি দিতেই মিথ্যা ঘোষণা দেয়। পণ্যের মোট পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৮০টি। এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী, পণ্যটির প্রতি কেজির ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য দুই দশমিক ৭৫ ডলার। ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ শুল্ককর হলে চালানটির শুল্ককর দাঁড়ায় দুই কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কিন্তু আমদানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য ছাড় করা হলে রাজস্ব ফাঁকি দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রকাশিত

সূত্র আরও জানায়, কাস্টমস গোয়েন্দার কাছে মিথ্যা ঘোষণার তথ্য থাকায় ১৩ আগস্ট অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে পণ্যটির খালাস স্থগিত (লক) করা হয়। এর পরও আইসিডি কমলাপুর ১৭ আগস্ট পণ্য শুল্কায়ন করে। ১৮ আগস্ট ছয়টি ট্রাকভর্তি পণ্য আইসিডি খালাস পয়েন্টে খালাসের অপেক্ষায় থাকে। পরে কাস্টমস গোয়েন্দা খবর পেয়ে খালাস পয়েন্ট থেকে ট্রাকভর্তি পণ্য আটক করে।

মিথ্যা ঘোষণার পণ্য অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে লক করার পরও কীভাবে খালাস হচ্ছে, এ বিষয়টি জানিয়ে এনবিআরকে চিঠি দেয় কাস্টমস গোয়েন্দা। পরে এনবিআরের একজন প্রথম সচিবের নেতৃত্বে একটি দল, কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও আইসিডি কমলাপুর কর্মকর্তারা চালানটি পরীক্ষা করেন। প্রতিনিধিদল প্রতিষ্ঠানটি মিথ্যা ঘোষণায় রাজস্ব ফাঁকি দিতে অন্য এইচএস কোডে পণ্য খালাসের চেষ্টা করেছে বলে মত দেয়। কিন্তু কমলাপুর আইসিডি কাস্টম হাউস আমদানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য ছাড়ে অনড় থাকে।

সূত্র জানায়, পরে এনবিআরের চাপে আমদানিকারকের ব্যাংক গ্যারান্টি এক কোটি ৬৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা নিয়ে ২৩ আগস্ট পণ্য খালাস করা হয়। কিন্তু মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যে দ্বিগুণ জরিমানার বিধান (প্রায় তিন কোটি টাকা) থাকলেও তা আদায় করা হয়নি। অন্যদিকে ব্যাংক গ্যারান্টি কেন দিতে হলো, তা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। আমদানিকারকের দাবি, সমজাতীয় পণ্যে একই হারে শুল্কায়নে এর আগে আদালতের রায় তার পক্ষে রয়েছে। ব্যাংক গ্যারান্টি কেন নেওয়া হলো এ নিয়ে আমদানিকারক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

এনবিআরের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, আমদানিকারক মূলত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই অন্য এইচএস কোডে পণ্য শুল্কায়নের চেষ্টা করেছে। কিন্তু আইসিডি কাস্টমস গোয়েন্দার তথ্য আমলে নিয়ে সঠিকতা যাচাই করলে আমদানিকারক সাহস পেত না। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। তবে আইসিডি চাইলে আইন অনুযায়ী জরিমানা আদায় করতে পারত।

অপরদিকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পণ্যের এইচএস কোডের সঠিকতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানোর আবেদন করে। পরে এনবিআরের নির্দেশে বুয়েট ও বিসিএসআইআরে নমুনা পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আইসিডি কমলাপুর কমিশনার মোবারা খানমকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বক্তব্য চেয়ে মোবাইলে খুদেবার্তা দেওয়া হয়। তিনি ‘অফিস সময়ে’ ফোন করার বিষয়ে বলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০