নিজস্ব প্রতিবেদক: কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ২০২ অর্থাৎ ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ পার করেছে। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন। রাজস্ব আহরণ আর সেবা প্রদানের মতো রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। মূলত পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব আর সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

আক্রান্তের হার বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, হয়েছেন। তবে স্বস্তির খবরও আছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগ সুস্থ হয়েছেন। সুস্থ হয়ে অনেকেই আবার কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বেশিরভাগই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
## আক্রান্ত ২০২, মারা গেছেন চারজন, সুস্থ ১৫৩, চিকিৎসাধীন ৪৪
## আক্রান্তদের মধ্যে একজন সদস্য, একজন কমিশনার
## ৫ জন ডিসি, ৭ জন এসি, ৪৫ জন আরও, ৮২ জন এআরও
## আক্রান্তের শীর্ষে সিলেট ভ্যাট, দ্বিতীয় চট্টগ্রাম কাস্টম
কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ২০২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আক্রান্তদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা, ঢাকা কাস্টম হাউসের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এবং ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের একজন গাড়ি চালক।

সূত্র আরও জানায়, আক্রান্ত ২০২ জনের মধ্যে নেগেটিভ এসেছেন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৫৩ জন। ১৫৩ জনের মধ্যে বেশিরভাগের দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। তারা সম্পূর্ণ সুস্থ। আবার অনেকের একবার নেগেটিভ এসেছে। তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৪৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সূত্রমতে, আক্রান্তদের মধ্যে কাস্টমসের একজন সদস্য পরিবারসহ আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া একজন কমিশনার আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ৫ জন ডেপুটি কমিশনার, ৭ জন সহকারী কমিশনার, ৪৫ জন রাজস্ব কর্মকর্তা ও ৮২ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রয়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা গেছে। কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাজস্ব কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মজমুদার। তিনি ২০ মে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যায়। তিনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত ছিলেন।

১২ জুন মারা যান রাজস্ব কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঢাকা কাস্টম হাউসে তিনি কর্মরত ছিলেন। ১৬ জুন মারা যান গাড়ি চালক আইয়ুব আলী। তিনি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে কর্মরত ছিলেন। ২০ জুন রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কবির হোসেন শিকদার। তিনি ঢাকা কাস্টম হাউসে কর্মরত ছিলেন।
সূত্র জানায়, আক্রান্ত ২০২ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪১ জন আক্রান্ত সিলেট ভ্যাট কমিশনারেটে। এর মধ্যে একজন সহকারী কমিশনার, ছয়জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ১৩ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, দুইজন অফিস সহকারী, একজন উচ্চমান সহকারী, পাঁচজন এলডিএ, একজন এসআই, ১০ জন সিপাহী, একজন সুইপার ও একজন অফিস সহায়ক।
দ্বিতীয় আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এ হাউসে ৩২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন ডেপুটি কমিশনার, ১৫ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ১৪ জন, একজন কম্পিউটার অপারেটর ও একজন অফিস সহায়ক।
ঢাকা কাস্টম হাউসে ২০ জন। এর মধ্যে একজন ডেপুটি কমিশনার, দুইজন সহকারী কমিশনার, দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা, ১৪ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন সিপাহী। আইসিডি কমলাপুর আটজন। এর মধ্যে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা, চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, একজন এসআই, একজন সিপাহী, একজন গাড়ি চালক ও একজন ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট।

চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে তিনজন। এর মধ্যে দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন সিপাহী। ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঁচজন। এর মধ্যে দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, দুইজন সিপাহী ও একজন ড্রাইভার। ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে পাঁচজন। এর মধ্যে একজন সহকারী কমিশনার ও চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা।
ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে ১৫ জন। এর মধ্যে চারজন রাজস্ব কর্মকর্তা, ছয়জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, একজন উচ্চমান সহকারী, একজন কম্পিউটার অপারেটর, দুইজন সিপাহী ও একজন গাড়ি চালক। ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটে পাঁচজন। এর মধ্যে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। রংপুর ভ্যাট কমিশনারেটে একজন ডেপুটি কমিশনার ও একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে ১৩ জন। এর মধ্যে সহকারী কমিশনার দুইজন, দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা, পাঁচজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, একজন অফিস সুপার, দুইজন এসআই ও একজন সিপাহী। চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে চারজন। এর মধ্যে দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা, একজন ক্যাশিয়ার ও একজন সিপাহী।

কাস্টমস গোয়েন্দায় ১২ জন। এর মধ্যে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা, ছয়জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, তিনজন উচ্চমান সহকারী, একজন সিপাহী ও একজন স্টেনোটাইপিস্ট। মোংলা কাস্টম হাউস পাঁচজন। এর মধ্যে একজন সহকারী কমিশনার, একজন রাজস্ব কর্মকর্তা, দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন প্রধান সহকারী।
কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটে একজন উচ্চমান সহকারী ও একজন সিপাহী। চট্টগ্রাম কাস্টমস ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমিতে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা। যশোর ভ্যাট কমিশনারেটে চারজন। এর মধ্যে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা, দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন সিপাহী।
পানগাঁও কাস্টম হাউসে একজন সহকারী কমিশনার ও একজন রাজস্ব কর্মকর্তা। বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) একজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও একজন উচ্চমান সহকারী। আপীলাত ট্রাইব্যুনালে একজন ডেপুটি কমিশনার। এনবিআরে একজন ডেপুটি কমিশনার ও একজন উচ্চমান সহকারী।
ভ্যাট গোয়েন্দায় একজন রাজস্ব কর্মকর্তা, একজন সিপাহী ও একজন গাড়ি চালক। রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটের দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা, দুইজন সিপাহী ও একজন গাড়ি চালক। আপীল-১ এর একজন অফিস সহায়ক। কাস্টমস মূল্যায়ন ও নিরীক্ষা কমিশনারেটের কমিশনার ও ক্যাশিয়ার। বেনাপোল কাস্টম হাউসে একজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা।
সূত্র আরও জানায়, বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় নমুনা পরীক্ষা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অ্যাসোসিয়েশন থেকে কয়েকটি হাসপাতালের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া কাস্টম হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেট নিজস্ব উদ্যোগে পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে।
###