কাস্টমস সেবা পাওয়া যাবে অনলাইনে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাস্টমসের সব সেবা অনলাইনে দিতে ওয়েবসাইট চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এ ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন। নতুন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমদানি ও রফতানিকারকরা অনলাইনে কাস্টমসের সব পাওয়ার পাশাপাশি কাস্টমসের এসআরও, ব্যাগেজ রুল, বিদেশগামী যাত্রীদের প্রয়োজনীয় তথ্য, শুল্ক সুবিধা, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকা, ট্যারিফসহ কাস্টমসের সব ম্যাপ পাবেন।

এম এ মান্নান বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার ছিল। সেজন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও ব্যবসার কাজকে সহজতর করে এ উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবনের সঙ্গে ব্যবসাকে যুক্ত করে সব ধরনের সেবা সহজতর করা হয়েছে। গত কয়েক বছর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও ব্যবসার পরিবেশে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সরকার বিদেশি সাহায্যের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেরা করার চিন্তা করছে। এ সবকিছুতেই ব্যবসায়ীদের অংশীদারিত্ব বেড়েছে। ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানকে সব উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ব্যবসা সহজতর করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদফতরের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কাস্টমসের ডিজিটাইজেশন এরই একটি অংশ। এর ফলে ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় বাঁচবে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ে ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি বিদেশি দৈনিক লিখেছে, বাংলাদেশ (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানকে (সাবেক পশ্চিম পাকিস্থান) সব দিক থেকে ছাড়িয়ে গেছে শুধু অর্থনৈতিক দিক নয়, জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। জাতীয় উৎপাদন, মাথাপিছু জিডিপি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যবসা-বাণিজ্য, গণতন্ত্রায়ন, স্বচ্ছতা অর্জন এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে।

অনুষ্ঠানে কাস্টমসের নতুন ওয়েবসাইট সম্পর্কে তুলে ধরে ইউএসএআইডির বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাক্টিভিটির চিফ অব পার্টি মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, কাস্টমসের নতুন এ ওয়েবসাইট একটি ডায়নামিক ওয়েবসাইট। এতে বাংলাদেশ কাস্টমসের সব তথ্য পাওয়া যাবে। এ ওয়েবসাইটে কাস্টমসের সব ফর্ম পাওয়া যাবে। সব ফর্ম ডাউনলোড ও কিছু কিছু ফর্ম অনলাইনে পূরণ করা যাবে। কিছু রেজিস্ট্রেশন করা এবং পণ্য ডিক্লারেশন দেওয়া যাবে। এখানে ডিউটি ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে শুল্কায়ন করা যাবে। কাস্টমসের সব এসআরও পাওয়া যাবে। ব্যাগেজ রুল, বিদেশগামী যাত্রীদের প্রয়োজনীয় তথ্য, বাংলাদেশে কোন কোন পণ্য শুল্কমুক্ত, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের কোন কোন পণ্য শুল্কমুক্ত, সব কাস্টম হাউজের ম্যাপ, ট্যারিফ ইত্যাদি থাকবে। ওয়েবসাইট বাংলা ও ইংরেজি দু’ভাষায় ব্যবহার করা যাবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর জ্যানিনা জারুয়েলস্কি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা পরিবেশ সহজতর করতে ইউএসইডি অনেক আগে থেকে কাজ করে আসছে। কাস্টমসের ডিজিটালাইজেশনের ফলে ব্যবসার কাজ অনেক বেশি স্বচ্ছ ও নিরবচ্ছিন্ন হবে। এতে ব্যবসায়ীদের সময় বাঁচার পাশাপাশি কাজের গতি বাড়বে। পণ্য খালাসে নানা ধরনের হয়রানি বন্ধ হবে। ডিজিটাল ওয়েবসাইট নতুন করে শুরু করা ব্যবসায়ীদের আমদানিতে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ইউএসএআইডির সঙ্গে এনবিআরের অংশীদারিত্ব রয়েছে। এ ওয়েবসাইট তৈরির মাধ্যমে অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় হবে। নতুন এনবিআর গঠনের ক্ষেত্রে এ ওয়েবসাইট সহায়তা করবে। এনবিআর ব্যবসার গতি বাড়াতে সহায়তা করছে। সেজন্য সিঙ্গেল উইন্ডোজ চালুর ক্ষেত্রে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। কাস্টমসের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য কাজ করছে এনবিআর।

অনুষ্ঠানশেষে নতুন এ ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য খন্দকার আমিনুর রহমান ও এফবিসিসিআই’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিজাম উদ্দিন রাজেশ বক্তব্য রাখেন।