ক্রীড়া ডেস্ক : কে ভেবেছিলেন, ট্র্যাকের কিংবদন্তির বিদায়টা এভাবে দেখতে হবে? জ্যামাইকান লিজেন্ড উসাইন বোল্টের বিদায়টা এমন হতাশার হবে, সেটি হয়তো ভাবেননি কেউ। সময় আর বাস্তবতা কখনো কখনো কঠিন সত্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। একটা সময় বোল্ট ছাড়া অন্য কাউকে ট্র্যাকে তার নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হতো। বোল্টের প্রতিপক্ষ বোল্ট নিজে। ট্র্যাকে নামতেন আর দৌড় শেষ করতেন সবাইকে পেছনে ফেলে। একের এক সাফল্যের পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিংবদন্তি হিসেবে। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষটা যে ভালো হলো না তার। করুণভাবে বিদায় নিতে হলো লন্ডনের বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে। জীবনের শেষ ইভেন্টে ট্র্যাকে নেমে ইনজুরিতে পড়তে হয় তাকে। ইনজুরির কারণে তাকে ট্র্যাক ছাড়তে হয়েছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
লন্ডনে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটারের ইভেন্টে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপর জীবনের সর্বশেষ ইভেন্ট ৪*১০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতে শেষ করতে চেয়েছিলেন বোল্ট। কিন্তু ভাগ্য যে তার সহায় ছিল না। ক্যারিয়ারের শেষ ইভেন্টে দৌড়ই শেষ করতে পারলেন না অলিম্পিকে আটটি সোনাজয়ী এ অ্যাথলেট। তাই জ্যামাইকান এ গতিদানবের বিদায়টি ঠিক তার মতো হলো না।
গত পরশু রাতে ৪*১০০ মিটার রিলেতে সবার আগে দৌড় শেষ করে গ্রেট ব্রিটেন। ৩৭.৪৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে তারা সোনা জিতেছে। ৩৭.৫২ সেকেন্ড নিয়ে রুপা জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ৩৮.০৮ সেকেন্ডে জাপান জিতেছে ব্রোঞ্জ।
তবে বোল্টের এবারের শুরুটা এর আগের ১০০ মিটারের মতো ছিল না। প্রতিযোগীদের সঙ্গে শুরুর দিকে ভালোই লড়ছিলেন তিনি, কিন্তু এবার শেষটা ভালো হলো না। শেষ ল্যাপে ফিনিশিং লাইন থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে থাকতেই চোট পান বোল্ট। সতীর্থ ইয়োহান ব্লেকের কাছ থেকে ব্যাটন নিয়েই দৌড়ের গতি বাড়ান তিনি। আর এতেই বিপদে পড়েন এ গতিদানব। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে লুটিয়ে পড়েন ট্র্যাকেই। জ্যামাইকান এ তারকার চোটের সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে ব্রিটেন। মিচেল ব্লেক তাদের হয়ে জয় নিশ্চিত করেন।
বোল্টের ক্যারিয়ারে সাফল্যের তুলনায় ব্যর্থতা ছিল খুবই নগণ্য। একই প্রতিযোগিতার ২০১১ সালের আসরে ১০০ মিটারে ফল্স স্টার্টের জন্য ডিসকোয়ালিফাইড হয়েছিলেন বোল্ট। ওই একটি কালো অধ্যায় ছাড়া ২০০৯ সাল থেকে এ আসর পর্যন্ত ১০০, ২০০ এবং ৪*১০০ মিটারে সোনা জিতেছিলেন তিনি।
বোল্টের এরকম বিদায় মেনে নিতে পারেনি তার সতীর্থরাও। ইয়োহান ব্লেক বলেছেন, ‘একজন সত্যিকারের কিংবদন্তিকে এভাবে ভুগতে দেখাটা খুবই কষ্টের।’
জ্যামাইকান দলপতি ওমার ম্যাকলয়েড বোল্টের বিদায় সম্পর্কে বলেছেন, ‘ওর (বোল্ট) সঙ্গে যাই ঘটুক, ওর নামটা চিরদিন বেঁচে থাকবে।’
এছাড়া বোল্ট এখনো বিশ্বের সেরা অ্যাথলেট বলে দাবি করেছেন ১০০ মিটারের ইভেন্টে সোনাজয়ী জাস্টিন গ্যাটলিন। ‘এটা হলো বিদায়ের সময়, এতে আমি খুবই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি। ওয়ার্ম-আপের সময় আমরা এক অপরকে সম্মান করেছি। উসাইন বোল্ট একজন মহান অ্যাথলেট।’
এ আসরেই কয়েকদিন আগে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী জাস্টিন গ্যাটলিনের বিপক্ষে হেরে তৃতীয় হয়েছিলেন বোল্ট। এবার ৪*১০০ মিটার রিলেতে আরও বড় হতাশাকে সঙ্গী করে বিদায় নিলেন ১০০ ও ২০০ মিটারে
রেকর্ড সৃষ্টিকারী জ্যামাইকান
এ গতিদানব।
বোল্টের যত অর্জন
২০০৭ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপস রুপা (২০০ মিটার), রুপা (৪*১০০ রিলে)
২০০৮ অলিম্পিক সোনা (১০০ মিটার ও ২০০ মিটার)
২০০৯ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপস সোনা (১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ৪*১০০ রিলে)
২০১১ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপস সোনা (২০০ মিটার ও ৪*১০০ রিলে)
২০১২ অলিম্পিক সোনা (১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ৪*১০০ রিলে)
২০১৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপস সোনা (১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ৪*১০০ রিলে)
২০১৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপস সোনা (১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ৪*১০০ রিলে)
২০১৬ অলিম্পিক সোনা (১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ৪*১০০ রিলে)
২০১৭ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপস ব্রোঞ্জ (১০০ মিটার)