কিডনির ক্যানসার প্রতিরোধ

কিডনি মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ। ওপরের পেটের পেছনের দিকে মেরুদণ্ডের দুই পাশে শিমের বিচি আকৃতির দুটি কিডনি অবস্থিত। এর প্রধান কাজ শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়া। আবার প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানগুলো শোষণ করে রক্তে পৌঁছে ভারসাম্য রক্ষা করা। তবে নানা কারণে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। কিছু রোগ ভালো হয়ে যায়। আবার কিছু রোগ কখনোই সারে না। তেমনই একটি হলো কিডনির ক্যানসার।

ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, পরিবারে কারও ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে এই ক্যানসার হতে পারে। পরিবেশগত কারণ যেমন আর্সেনিক, অ্যাসবেস্টস, ক্লোরোইথাইলিন ও অন্যান্য ক্রোমিয়াম যৌগের সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের কিডনির ক্যানসারের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। দীর্ঘদিনের কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের, যাদের ডায়ালাইসিস করতে হয়, তাদেরও কিডনির ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।

চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের কিডনির ক্যানসারের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। বয়স ৫০ বা ৬০ পেরিয়ে গেলে এই ঝুঁকি আরও বাড়ে। দুর্বলতা, রক্তহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য, প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া, পিঠে ও কোমরে ব্যথা হওয়া এই ক্যানসারের অন্যতম উপসর্গ। এগুলো দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যদি ক্যানসার অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে যায়, তাহলে নতুন ধরনের উপসর্গ দেখা দেবে। যেমন ক্যানসার ফুসফুসে ছড়ালে কাশির সঙ্গে রক্ত যায়, বুকে ব্যথা হতে পারে। আবার মস্তিষ্কে ছড়ালে রোগীর মাথাব্যথা, বমি, এমনকি খিঁচুনি ও অচেতন হয়ে পড়তে পারে। যদি হাড়ে ছড়ায়, তাহলে ব্যথা ও হাড় ভেঙে যেতে পারে। কাজেই এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার।

কিডনির ক্যানসার শনাক্তে চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, এক্স-রে আইভিইউ, সিটি গাইডেড এফএনএসি অথবা এফএনএবি পরীক্ষা করতে বলেন।

চিকিৎসা: কিডনির ক্যানসারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের আকার, বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি এবং হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টের ওপর।

রেডিক্যাল সার্জারি, নেফ্রন স্পেয়ারিং সার্জারি, ইমিউনোথেরাপি, বায়োলজিক্যাল থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, কেমোথেরাপি প্রভৃতি পদ্ধতিতে এই সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। রোগীর অবস্থা ও ক্যানসারের পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করেন চিকিৎসক।

স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চার মাধ্যমে ক্যানসার থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার, আর্সেনিকসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর সুষম খাবার, শাকসবজি, তাজা ফলমূল খেতে হবে। কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করতে হবে। পরিছন্নতা বজায় রাখতে হবে, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

অধ্যাপক ডা. কাজী মনজুর কাদের

বিভাগীয় প্রধান, অনকোলজি বিভাগ

ডেল্টা হাসপাতাল লিমিটেড

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০