Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 8:56 am

কিডনি বিক্রিতে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিন

একসময় গ্রামবাংলায় ছেলেধরাদের কথা শোনা যেত। ওই ছেলেধরারা নাকি শিশুদের নিয়ে বিক্রি করে দিত নিঃসন্তান দম্পতির কাছে, কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করাত। আবার এও প্রচলিত ছিল যে, শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হতো কিংবা বিভিন্ন অঙ্গ অন্যের দেহে সংযোজন করা হতো এবং এ লক্ষ্যে ভিন দেশে পাচার করা হতো। হয়তো কোনো সময় এমন ঘটেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ছেলেধরা তত্ত্ব কতটা সত্য, তা অজানাই থেকে গেল। অবশ্য কারও ধারণা,  চঞ্চল শিশুকে সামলাতে,  ঘুম পাড়াতে মায়েরাই এসব গল্প তৈরি করেন।

ছেলেধরা গল্প নিছক কল্পকাহিনি হলেও কিডনি বিক্রির বিষয় তা নয়। মাঝেমধ্যে কিডনি চক্রের খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এর সর্বশেষটি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। খবরের তথ্য: বুধবার রাজধানীর ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই কিডনি বিক্রি চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। চক্রের হোতা কিডনি ক্রেতার কাছ থেকে ৫০ লাখ নিয়ে দাতাকে দিত পাঁচ লাখ। টাঙ্গাইলের আনিছুর রহমান নিজের কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে গড়ে তোলে কিডনি বিক্রি প্রতারক চক্র। বিত্তবান কিডনি গ্রহীতার কাছ থেকে কিডনিপ্রতি ৫০ লাখ টাকা চুক্তি করলেও দাতাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিতেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)  প্রযুক্তিনির্ভর অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে  প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপনে অনিয়ম এবং দাতা ও  গ্রহীতার মধ্যে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিডনিদাতা ও কিডনিগ্রহীতার মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে গত সোমবার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। এটি ছিল নতুন এই হাসপাতালের প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন। বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বিশেষ হাসপাতালে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন মিথ্যা পরিচয়ে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন চিকিৎসার অংশ। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজনে একজন যেমন উপকৃত হয়, তেমনি আরেকজনের জীবন বিপন্নও হতে পারে।  এটি  নিয়ে  অবৈধ ব্যবসাও  হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনয়ন এবং প্রকৃতই জীবন রক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আইনও প্রণীত হয়েছে। আইন অনুসারে নিকট আত্মীয় হিসেবে ২৩ জন কিডনি দান করতে পারেন। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে নিকটাত্মীয় না পাওয়া গেলে তখন মানবিক কারণে যাতে কেউ কিডনি দান থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্যও ব্যবস্থা আছে। আইন অনুসারে একটি প্রত্যয়ন বোর্ড কিডনি-বাণিজ্য হচ্ছে কি না, তা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে প্রত্যয়ন করবে। আলোচিত ঘটনাগুলোয় অনুনমোদিত উপায়ে কিডনি সংযোজন ও ব্যবসা হয়েছে। এ ধরনের জঘন্য কাজে জড়িতদের কঠোর শাস্তি এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের যথাযথ নিশ্চিত করা গেলেই কিডনি বিক্রি চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা সম্ভব।