কিশোরগঞ্জে বাড়ছে রেস্টুরেন্টের কদর

১৫ বছর আগেও কিশোরগঞ্জ শহরে ভিন্ন স্বাদের রেস্টুরেন্ট ছিল না বলা যায়। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে উদরপূর্তির পাশাপাশি নিরিবিলি সময় কাটানোর মতো রেস্টুরেন্ট ছিল না। সময় গড়ানোর সঙ্গে সেসব দিন গত হয়েছে। এ শহরে গড়ে উঠেছে অনেক ব্যতিক্রমধর্মী অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্ট। দেশি-বিদেশি নানা মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি এসব রেস্টুরেন্টের শিল্পকলা, আতিথেয়তা ও পরিবেশন যে কাউকে মুগ্ধ করবে। সেই সঙ্গে তৈরি করবে সুখানুভূতিও।
মানুষের দৈনন্দিন ও মৌলিক চাহিদার তালিকায় প্রথমে রয়েছে খাবার। আর তাই খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে বেশিই। ছোট-বড় সবার খাবারের প্রতি রয়েছে ভিন্ন পছন্দ, ভালো লাগা। এ চাহিদার ওপর ভিত্তি করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা এখন উদরপূর্তির পাশাপাশি বেড়ানো ও বিনোদনের স্থান হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দিবস উদ্যাপন ছাড়াও পারিবারিক অনুষ্ঠান পালন ও নানা উপলক্ষে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে পছন্দ করে অনেকে।
শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভোজনরসিকদের আস্থা অর্জন করতে পারায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রেস্টুরেন্টগুলো। প্রতিদিন এসব রেস্টুরেন্টে নানা বয়সী নারী-পুরুষের সমাগম হয়।
স্টেশন রোড এলাকার গাংচিল রেস্তোরাঁ, রথখলার কয়লা, ধানসিঁড়ি ফুড প্যালেস ও দারুচিনি রেস্টুরেন্ট এবং গৌরাঙ্গবাজারের স্টার ওয়ান রেস্টুরেন্ট ও উজানভাটি রেস্টুরেন্টে ভিড় লেগেই থাকে। বড়বাজার এলাকার ক্যাসেল সালাম চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, কালীবাড়ি মোড়ের কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টও ভীষণ জনপ্রিয়।
গাংচিল রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী মো. আবু সাঈদ বলেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাসের দ্রুত পরিবর্তন, খাদ্য পরিবেশনের ধরন ও ধারণাকে মাথায় রেখে মনোমুগ্ধকর শিল্পকলা ও মুখোরচক খাবার নিয়ে ২০০৫ সালের ৩১ জানুয়ারি শুরু হয় আমাদের পথচলা। কিশোরগঞ্জে আমরাই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করি। শুরু থেকে খাবারের গুণগত মান ধরে রেখেছি। খাবারের মেনুতে হাওরের ছোট-বড় তাজা মাছ সবসময়ই থাকে। প্রায়ই গাংচিল রেস্তোরাঁ পরিবারের পক্ষ থেকে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের মধ্যে বিনা মূল্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
গাংচিল রেস্তোরাঁতে পরিবার নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায়ই এ রেস্তোরাঁতে খাবার খেতে আসি। রেস্তোরাঁর অভ্যন্তরীণ নকশা ও সুস্বাদু দেশীয় খাবার আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে আকৃষ্ট করে, তাই বারবার আসি এখানে। ও হ্যাঁ, রমজানের ইফতার আইটেমের মধ্যে এখানকার শাহী জিলাপি ও হালিম সবচেয়ে সেরা।
কয়লার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা বিজয় খোকা বলেন, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর আমরা কয়লার উদ্বোধন করি। আধুনিক ডেকোরেশনের জন্য চায়না থেকে কৃত্রিম ঘাস ও লতাপাতা আনা হয়েছে। ভোরের স্নিগ্ধ আবহ ও প্রকৃতির সবুজাভের ছোঁয়ায় ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা হয়েছে। রেস্টুরেন্টের দেওয়াল ও টেবিলের পাশসহ সব জায়গাতে রয়েছে শৈল্পিকতার ছোঁয়া। অত্যাধুনিক ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে সার্বক্ষণিক মিউজিকের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের রেস্টুরেন্টে ক্রেতারা লাইভ দেখতে পান তাদের অর্ডার করা খাবার কীভাবে তৈরি হয়। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ শেফ চায়নিজ, থাই, মেক্সিকান, ইতালিয়ান, বাংলা ও ইন্ডিয়ান খাবার ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুত করেন। মুখরোচক খাবারের তালিকায় কোরাল, রূপচাঁদা ও স্যামন রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি খাবারের মানের প্রতি। দুই শতাধিক খাবারের আইটেম নিয়ে চলছে আমাদের যাত্রা। আমরা চাই সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি ক্রেতারা যেন সুন্দর একটি পরিবেশে সময় কাটাতে পারেন।
পরিবার নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে আসা ইস্রাফিল বলেন, চমৎকার পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবারের মান খুব ভালো, ঢাকার নামিদামি রেস্টুরেন্টের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
ধানসিঁড়ি ফুড প্যালেসের স্বত্বাধিকারী রাজিবুল আলম বলেন, রুচিশীল পরিবেশে দেশীয় খাবারের পরিবেশন তরুণ প্রজ কে টানতে শুরু করেছে। ছয় বছর ধরে ব্যবসা করছি, ভালোই চলছে। সকালের নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবারের তালিকার মধ্যে দেশীয় খাবারই বেশি। শুরু থেকেই আমাদের একটা উদ্দেশ্য ছিল, খাবারের আসল স্বাদটা দেওয়ার। এজন্য প্রতিদিন তাজা মাছ ও মাংস ব্যবস্থা করাও বড় চ্যালেঞ্জের।

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০