Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:44 pm

কিশোর-কিশোরী ক্লাব আবার চালু হচ্ছে শিশুদের নাশতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যয় কমানোর অজুহাতে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিশুদের জন্য বন্ধ করে দেয়া নাশতা আবার চালু করতে যাচ্ছে সরকার। অর্ধেক বরাদ্দ দিয়ে, অর্থাৎ জনপ্রতি ১৫ টাকা করে ১ নভেম্বর থেকে নাশতা চালু হবে। নাশতা আবার চালু করার বিষয়ে বৃহস্পতিবার মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর নিজেদের ওয়েবসাইটে এক নোটিশ প্রকাশ করেছে। গত বুধবার শিশুদের নাশতা বন্ধ করে দেয়া নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর গতকাল তা আবারও চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারাদেশে ক্লাবগুলো ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় পরিচালনা করে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য, সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রান্তিক কিশোর-কিশোরীদের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সক্ষম করা। বাল্যবিয়ে রোধে সচেতন করা। প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে জানানো এবং সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করা। সপ্তাহে দুই দিন ক্লাবে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে শিশুরা অংশ নেয়।

কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের উপপরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, ওয়েবসাইটে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাদের বরাবর চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে নাশতার বরাদ্দ বাবদ টাকা পাঠানো শুরু হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে জনপ্রতি ১৫ টাকা বরাদ্দে নাশতা দেয়া শুরু হবে।

আগে নাশতার জন্য ৩০ টাকা বরাদ্দ ছিল, সেটা কবে চালু হবে জানতে চাইলে লিয়াকত আলী বলেন, পূর্ণ বরাদ্দ চেয়ে অধিদপ্তর মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। খুব শিগগিরই পূর্ণ বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাদের বরাবর গতকাল বুধবারের তারিখে প্রকল্প পরিচালক মো. তরিকুল আলমের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, নাশতা খাতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২৫ শতাংশ বরাদ্দ সংরক্ষিত রেখে ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ থেকে অর্ধেক বাবদ ১৭ কোটি ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও প্রথম কিস্তিতে পাঁচ কোটি ৬৮ লাখ  ৮৪ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। সেখান থেকে নাশতা বাবদ ব্যয় করা হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তি বাবদ আরও পাঁচ কোটি ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়ায় জনপ্রতি ১৫ টাকা হারে বরাদ্দ দেয়া হবে। ক্লাব সদস্যরা যেন ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাবের’ প্রতি আগ্রহ না হারায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। নাশতা খাতে পূর্ণ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পত্রালাপ অব্যাহত আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্পের উপপরিচালক লিয়াকত আলী জানান, এখন যে বরাদ্দ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে, তা দিয়ে জনপ্রতি ১৫ টাকা হিসাবে আড়াই মাস পর্যন্ত নাশতা দেওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন’ প্রকল্প থেকে গত জুলাই থেকে শিশুদের নাশতার বরাদ্দ অর্ধেক করা হয় এবং সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে শিশুদের নাশতা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। ৩০ টাকা বরাদ্দ থাকার সময়ে শিশুদের মৌসুমি ফল, খেজুর, কেক, দুধ ও পাউরুটি দেওয়া হতো। জুলাই মাস থেকে বরাদ্দ অর্ধেক কমে যাওয়ায় ফল বাদ দিয়ে শুধু দুধ-পাউরুটিতে নেমে আসে নাশতা। পরে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। নাশতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্লাবগুলোয় শিশুদের উপস্থিতির সংখ্যাও কমে গেছে।

এদিকে ক্লাবের সংখ্যার ক্ষেত্রে সংশোধিত তথ্য জানিয়ে অধিদপ্তর বলেছে, মোট ক্লাবের সংখ্যা চার হাজার ৮৮৩ (৪৫৫৩টি ইউনিয়ন ও ৩৩০টি পৌরসভার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে)। মোট কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা এক লাখ ৪৬ হাজার ৪৯০। প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জন করে কিশোর-কিশোরী। প্রতি শুক্রবার ও শনিবার বেলা ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আবৃত্তি, গান ও কারাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাসে জেন্ডার সচেতনতার বিষয়ে সভার আয়োজন করা হয়। ৫৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।