Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 10:28 pm

কীভাবে আস্থা ফিরবে বিনিয়োগকারীদের?

রুবাইয়াত রিক্তা: পুঁজিবাজারে বড় পতন অব্যাহত রয়েছে। পতনের হার আগেরদিনের থেকে কমলেও গতকাল ডিএসইএক্স সূচক কমে ৬২ পয়েন্ট। দরপতন হয় ৬৬ শতাংশ কোম্পানির। লেনদেন কমে ২৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক এবং ওষুধ ও রসায়ন খাত লেনদেনের শীর্ষে উঠে এলেও এ দুই খাতে বিক্রির চাপ বেশি ছিল। একমাত্র কাগজ ও মুদ্রণ খাত ছাড়া ছোট বড় সব খাতেই ছিল বিক্রির চাপ। এদিকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃবৃন্দ অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেবে। আর এ টাকা বাজারে বিনিয়োগের  আগে শেয়ারের দর নি¤œ পর্যায়ে নামানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে দরপতন ঘটানো হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক বিনিয়োগকারী। কারণ বাজারে এ মুহূর্তে যে অস্বাভাবিক পতন হচ্ছে তার যৌক্তিক কারণ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। এদিকে ‘মড়ার উপর খাঁরার ঘা’ হিসেবে যোগ হয়েছে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কিছু কোম্পানির প্রতারণা। জুন ক্লোজিংয়ের প্রায় সব কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অনেক কোম্পানি মুনাফায় থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করেছে। কারণ সর্বশেষ বছরে ভালো ইপিএস হওয়া সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের জন্য নামমাত্র বা নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে তারা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, অ্যাকটিভ ফাইন, সালভো কেমিক্যাল, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কসহ আরও বেশকিছু কোম্পানি। ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত বছরে রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের শেয়ারপ্রতি আয় হয় চার টাকা ২১ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল পাঁচ টাকা ৩১ পয়সা। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও ২০১৯ সালে কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত হিসাববছরে সালভো কেমিক্যালের ইপিএস হয়েছে ৬১ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭৪ পয়সা। আগের বছর পাঁচ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিলেও এ বছর কোনো লভ্যাংশের ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়। ২০১৯ সালে অ্যাকটিভ ফাইনের ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৯৭ পয়সা, যা ২০১৮ সালে হয়েছিল তিন টাকা ৪৪ পয়সা। কোম্পানিটি আগের বছর ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দিলেও এ বছর দেয় দুই শতাংশ নগদ। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের চলতি বছরে ইপিএস হয় ৪০ পয়সা, যা আগের বছর হয়েছিল ৪৮ পয়সা। ২০১৮ সাল থেকে মুনাফায় থাকলেও কোম্পানিটি লভ্যাংশ না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করে আসছে।

বাজারে শেয়ারের দর ক্রমাগত পতনে বিনিয়োগকারীদের ভরসা ছিল কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর। কিন্তু কোম্পানিগুলো যদি এভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করতে থাকে তাহলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা কেন আসবে আর কেনই বা বাজারের প্রতি আস্থা ফিরবে?