শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত অনেক রোগের মধ্যে হাঁপানি অন্যতম। শিশুদের মধ্যে সচরাচর হাঁপানি দেখা যায়।
হাঁপানি শ্বাসনালির একটি প্রদাহজনিত রোগ। সাধারণত জীবনের পাঁচ বছরের মধ্যে পুরো রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে যায়। তবে শিশুদের মধ্যে একটা অংশের রোগের লক্ষণ পাঁচ বছর পরে বড় হলেও প্রকাশ পেতে পারে। তবে সূচনাতেই রোগের লক্ষণ দেখে রোগটি র্নিণয় করা বেশ জটিল। কারণ শিশুরা খুব ঘন ঘন সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হয়। এসব রোগে আক্রান্ত শিশুরও হাঁপানির মতো লক্ষণ আসতে পারে। সাধারণত হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসনালি অতি সংবেদনশীল থাকে। শিশুদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জেনের আক্রমণের ফলে রক্তে কিছু সংবেদনশীল পদার্থ নিঃসৃত হয়। এসব পদার্থ শ্বাসনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে যায়। এতে শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
হাঁপানির উদ্দীপকের মধ্যে অন্যতম হলো যে কোনো ধরনের ধোঁয়া, মশার স্প্রে, সুগন্ধী, পরাগ রেণু, মাটি, ধূলিকণা ও ভাইরাল সংক্রমণ। কিছু খাবারও রক্তে সংবেদনশীল পদার্থ নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যেমন গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ প্রভৃতি। সাধারণত রোগীদের অ্যালার্জেনের পারিবারিক ইতিহাস থাকে। অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার পর বাচ্চা বারবার শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগলে এবং এর সঙ্গে বুকে বাঁশির মতো শোঁ-শোঁ শব্দ শোনা যায়, সেইসঙ্গে বারবার কাশি লেগে থাকে, কিংবা রাতে শোওয়ার সময় কিংবা ভোরের দিকে কাশি বা শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দিলে বাচ্চার হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে।
হাঁপানি আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশু তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারে। অল্প কিছু শিশু মাঝারি থেকে সাংঘাতিক রকমের হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়। ফলে তাদের খেলাধুলা ও স্বাভাবিক কাজকর্ম করার জন্য প্রতি দিন প্রতিষেধক ওষুধ নেওয়ার দরকার পড়ে। মনে রাখবেন, হাঁপানি হলো সারা জীবনের রোগ। তাই সঠিকভাবে এই রোগের চিকিৎসা জরুরি। সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যালার্জেন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে হাঁপানি আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিতে পারে। শিশুদের হাঁপানির চিকিৎসা সঠিকভাবে না করলে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জাকির হোসেন চিকিৎসক ও কলামিস্ট