শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভাবমর্যাদা সংকটে থাকা যুবলীগ নেতাদের ত্যাগের রাজনীতির মন্ত্র দিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সবাইকে এ কথাটা মনে রাখতে হবে ভোগে নয়, ত্যাগেই হচ্ছে মহত্ত্ব। কী পেলাম, কী পেলাম না সে চিন্তা নয়। মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম, কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম, মানুষের কল্যাণে কতটুকু কাজ করলামÑসেটাই হবে রাজনীতিবিদের চিন্তা-ভাবনা। আমাদের যুবসমাজকে সেভাবে গড়ে তুলতে চাই।’ গতকাল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের উদ্বোধন করে এ কথা বলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা। সূত্র: বিডিনিউজ।
ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, সংগঠন থেকেও বহিষ্কৃত হন তারা। যুবলীগের ভাবমর্যাদা ক্ষুণেরর জন্য ওই নেতাদের দায়ী করে কংগ্রেসের উদ্বোধন অধিবেশনে বক্তৃতা দেন সংগঠনটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দেশ গড়ে তুলতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন যুবসমাজের মেধা, শক্তি, তাদের মননকে কাজে লাগানো। একজন রাজনীতিবিদ যিনি হবেন, তার জীবনের সেই আদর্শ থাকতে হবে।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে যুবলীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। আদর্শের মধ্য দিয়েই কিন্তু একটি সংগঠন যেমন গড়ে ওঠে, দেশকেও কিছু দেওয়া যায়। এ কথাটি সব সময় মাথায় রাখতে হবে। উড়ে এসে জুড়ে বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এ সংগঠন গড়ে ওঠেনি। সংগঠন গড়ে উঠেছে নির্যাতিত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করার লক্ষ্য নিয়ে। সেই আদর্শ থেকে কখনও যদি কেউ বিচ্যুত হয়ে যায়, তাহলে দেশকে কিছুই দিতে পারে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, জঙ্গিপনা করে অনেক টাকা বানাতে পারে। ওই টাকা দিয়ে হয়তো জৌলুস করতে পারে, চাকচিক্য বাড়াতে পারে; কিন্তু সেটা দিয়ে মানুষের হƒদয় জয় করা যায় না। তাতে সম্মান পাওয়া যায় না।’
লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে একজন রাজনীতিক কীভাবে আদর্শ নিয়ে চলতে পারেন, তা জানার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা যেসব প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, তা নিয়ে করা প্রকাশনাগুলোও পড়ার পরামর্শ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা পারলাম, কেন পারলাম? আমরা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছি বলেই পেরেছি।’ মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ সততার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলার কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ওপর অনেক বদনাম দিতে চেয়েছিল। এক পদ্মা সেতু নিয়ে যখন অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, নিজের অর্থায়নে করব এবং আমরা আজ তা প্রমাণ করেছি যে নিজস্ব অর্থায়নেও আমরা করতে পারি। সততার শক্তি হচ্ছে সবচেয়ে বড়।’
এ প্রসঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইউনূসকে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নোবেল প্রাইজ পান; অথচ একটি ব্যাংকের এমডি’র পদ ছাড়েন না। সেই পদ কেন বয়সের কারণে ছাড়তে হলো, সে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ বন্ধের জন্য আমেরিকায় গিয়ে ধরনা দিলেন। তারা আমাদের ওপর দোষ দিল দুর্নীতির। আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম এবং সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি।’
বিগত সংসদ নির্বাচনের সমালোচনার জবাবে ২০০৮ সালের ভোটে বিএনপির ফল স্মরণ করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। তারা নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলে। অথচ ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেননি। বিএনপি যদি এতই জনপ্রিয় সংগঠন হয়ে থাকে, তাহলে মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল কেন? ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো কথা নেই।’
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার সঙ্গে আফ্রিকার কালো মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার বন্দিত্বের যে তুলনা বিএনপি নেতারা করেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী, যিনি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে, তার তুলনা করা হয় নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে। আমি মনে করি, এতে নেলসন ম্যান্ডেলাকে অপমান করা হচ্ছে। কারণ, নেলসন ম্যান্ডেলা তার জাতির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে কারাগারে ছিলেন। দুর্নীতি করে কারাগারে যাননি।’
যুবলীগের কংগ্রেসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান চয়ন ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ।