কুইক রেন্টালের ভবিষ্যৎ জানতে চায় আইএমএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুৎ সংকট দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। তিন ও পাঁচ বছরের জন্য এসব কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হলেও পরে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতে বিভিন্ন রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র ১৫-১৭ বছর পর্যন্ত চলবে।

এদিকে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গুনতে হয় উচ্চহারে ক্যাপাসিটি চার্জ। তাও আবার ডলারে পরিশোধ করতে হয় এ চার্জ। এছাড়া পরবর্তী সময়ে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের আদলে বড় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। এগুলোর নাম দেয়া হয় ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি)। এসব রেন্টাল ও আইপিপি মিলিয়ে ১৪ বছরে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনেছে সরকার। এ অবস্থায় রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে তা সরকারের কাছে পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

সংস্থাটির এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে চায় আইএমএফ।

একইদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও বৈঠক করে প্রতিনিধিদলটি। এ সময় পিডিবির কাছে ক্যাপাসিটি চার্জের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়।

সূত্র জানায়, বর্তমানে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। একই সঙ্গে এ খাতে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জের বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে বলা হয়, যেসব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে সরকার চুক্তি করেছিল সেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। এখন ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ পদ্ধতিতে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে নতুন করে আর ক্যাপাসিটি চার্জের প্রয়োজন হবে না। এছাড়া বৈঠকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়েও জানতে চায় প্রতিনিধিদল।

এদিকে বিদ্যুতে ভর্তুকি কমাতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া যায় কিনা, পিডিবির কাছে তা জানতে চায় আইএমএফ। তবে সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ ধরনের ঋণ নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানায় পিডিবি। গতকাল বিদ্যুৎ ভবনে পিডিবি কার্যালয় পরিদর্শন করে ঢাকায় সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদল। এ সময় পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আইএমএফ প্রতিনিধিদল জানতে চায়, ‘সরকারের কাছ থেকে পিডিবি যে ভর্তুকি নেয়, তার পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে, সেটি বেশি সুবিধাজনক হয় কিনা’Ñএ প্রশ্নের উত্তরে পিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটি ভায়াবল (উপযুক্ত) নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ পাওয়াটা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার পূরণের জন্য সরকার কিছু দায় নেয় এবং ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে পিডিবিকে ঋণের অর্থ সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। তবে পিডিবির আয়ের দ্বারা তা সম্ভব নয়। আর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিলে তা পরিশোধ করতে হয় না। এটি পিডিবির জন্য সুবিধাজনক।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদল জানতে চায়, সরকার ভর্তুকি বন্ধ করে দিলে পিডিবি কী করবেÑএর জবাবে পিডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তখন পিডিবি সরকারের নীতি মেনেই কাজ করবে।

আইএমএফ  প্রতিনিধিদলের প্রশ্ন ছিলÑএখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে, সেটি ২০৩০ সালে শেষ হবে কিনা। পিডিবি জানায়, সেটি সম্ভব নয়। কারণ, নতুন নতুন বেশকিছু আইপিপি আসছে। তাদেরও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। এখন পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে, কবে নাগাদ ক্যাপাসিটি চার্জ শেষ করা যাবে।

এদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের নাম সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সেজন্য সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং আগামীতে কী পরিকল্পনা রয়েছে সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণায়ের সঙ্গে বৈঠকে জানতে চেয়েছে প্রতিনিধিদলটি।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে আগামীতে রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দিয়ে ইলেকট্রনিকস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, চামড়াসহ বিভিন্ন শিল্পকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খাতভিত্তিক উপ-কমিটি গঠন করে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। এছাড়া শুল্ক কাঠামোর সংস্কার চলমান রয়েছে বলেও জানানো হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, পণ্য রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভুটান ও নেপালের সঙ্গে পিটিএ করেছে। এছাড়া ভারত, জাপান ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও চুক্তি করার আলোচনা চলছে।

প্রসঙ্গত, আইএমএফের প্রতিনিধিদলটি ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশে এসেছে। সম্প্রতি সংস্থাটির কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ অর্থনীতির নানা খাতে সংস্কারের প্রস্তাব করেছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছে আইএমএফ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০