Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:00 pm

কুকরী মুকরী

সাদমান সোবহান ইমরান: বন্ধুদের সঙ্গে কয়েকবার পাহাড়ে বেড়াতে গেছি। তবে দ্বীপ বা চরে কখনও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। এ কারণে এবার চর কুকরী মুকরী যেতে মনস্থির করি।

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭। সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিট। ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি ফারহান-৬ লঞ্চে যাত্রা শুরু করি। গন্তব্য দ্বীপজেলা ভোলার বেতুয়া। লঞ্চে উঠতে দেরি হয়েছিল। এজন্য লঞ্চের ভেতরে জায়গা পাইনি। বাধ্য হয়ে তাই ছাদে চড়তে হয়।

বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে সন্তর্পণে এগিয়ে যাচ্ছে লঞ্চ। রাতের মিটমিটে আলোয় নদী ও পাড়ের দৃশ্য দেখতে দেখতে ঢাকা পার হলাম। রাত বাড়ছে, বাড়ছে শীতের প্রকোপও। কিছুক্ষণ পর লঞ্চের ছাদে চাদর বিছিয়ে বসি। সবাই মিলে গল্প ও খাওয়া-দাওয়া করতে করতে অর্ধেক রাত পার করে দিই। ততক্ষণে চারপাশ আরও নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। যাত্রীদের অনেকে ঘুমিয়ে পড়েছেন। শুধু রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙছিল ইঞ্জিনের একটানা ঘটঘট শব্দ।  একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে লঞ্চের ছাদেই শুয়ে পড়ি। চোখের সামনে শুধু রাতের অন্ধকার আকাশ আর গুটিকয়েক তারা। দেখতে দেখতে চোখে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম।

সকাল ৯টার দিকে বেতুয়ায় পৌঁছে যাই। ঢাকা থেকে বেতুয়া যেতে লঞ্চে ১২ ঘণ্টা লাগে। লঞ্চ থেকে নেমে অটোবাইকে রওনা হলাম চরফ্যাশন বাজারের দিকে। দ্বীপ এলাকা হলেও চরফ্যাশন তুলনামূলক উন্নত। বাজারে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ে ‘জ্যাকব টাওয়ার’। সকালের নাস্তা সেরে বাসে চড়ে দক্ষিণ আইচা বাজারের উদ্দেশে রওনা দিলাম। সেখান থেকে অটোবাইকে চলে যাই কচ্ছপিয়া ঘাটে। এখান থেকে চর কুকরী মুকরীতে লঞ্চ চলাচল করে। তবে দেরি করায় লঞ্চ ধরতে পারিনি। তাই ট্রলার ভাড়া করে যেতে হলো।

নদীপথের এ যাত্রাটুকুও বেশ উপভোগ করেছি সেদিন। ট্রলার চলছে নদীর মাঝ দিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে আশপাশের গ্রাম পার হই। মাথার উপর উড়ছে নাম না জানা অনেক পাখি। বিস্তৃত সবুজ প্রান্তরে চরে বেড়াচ্ছে গরুর পাল। অবশেষে পৌঁছে যাই চরে।

আমরা বাবুল মাঝির বাড়িতে উঠি। দুপুরে আলুভর্তা, চিংড়ি ভাজি, ভাত, ডাল দিয়ে খাবার সারি। একটু বিশ্রাম নিয়ে রওনা দিলাম নারকেল বাগান দেখতে। যাওয়ার পথে অচেনা এক লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তবে অল্প কিছু সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে খুব ভাব হয় আমাদের। তিনিই আমাদের নারকেল বাগান দেখাতে নিয়ে গেলেন। পথে ঘন জঙ্গল পার হতে হয়। তাছাড়া অসংখ্য ম্যানগ্রোভ গাছও রয়েছে। মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আছে তার শ্বাসমূল। নারকেল বাগানে জেলেরা মাছ ধরে শুঁটকি বানান। এখানে এক কেজি চিংড়ির দাম মাত্র ৫০ টাকা। জায়গা হিসেবে নারকেল বাগান অতুলনীয়। সুন্দর! নদীর ধার ঘেঁষে বিস্তীর্ণ বেলাভূমি। সুন্দরবনের কটকার মতো। সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসি কুকরী মুকরী বাজারে।

রাতে বাজারে ঘুরে বেড়াই। স্থানীয়দের জীবনযাত্রা বেশ সহজ। রাতটি বাবুল মাঝির বাড়িতে কাটাই। পরদিন ভোরে সূর্য ওঠার আগে ট্রলারে চড়ে সোনারচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। চরমন্তাজে যাত্রাবিরতি করি। এখানে নাশতা সেরে সোনারচরের দিকে রওনা দিই। সেখান থেকে আবার কচ্ছপিয়া ঘাট। এরপর চরফ্যাশন। আবার এমভি ফারহান লঞ্চে ওঠা।

এভাবে আবারও প্রকৃতি ছেড়ে ব্যস্ত ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিই। দুটো দিনের জন্য ধোঁয়া, ধুলা, ব্যস্ততা ছেড়ে গিয়েছিলাম আকাশ, নদী, পাখি, গাছের অনেক কাছে।

সফটওয়্যার প্রকৌশলী