আমানুর রহমান খোকন, কুড়িগ্রাম: প্রতি বছর বন্যার আতঙ্ক ও ভোগান্তি নিয়ে জীবন-জীবিকা চলছে কুড়িগ্রামের চরবাসীর। এবার বন্যার আগেই বেসরকারি সহযোগিতায় নিজেদের বসতভিটা উঁচু করতে পেরে আনন্দে উচ্ছ্বসিত কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র চরবেষ্টিত ১০৫টি পরিবার। স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরডিআরএস বাংলাদেশ’র ট্রান্সবাউন্ডারি ফ্লাড রেজিলেন্স প্রকল্প কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে। এবারে বন্যাকালীন সঞ্চিত সম্পদ, শাকসবজি, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে শঙ্কায় তাদের দিন কাটাতে হবে না।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমর, ফুলকুমর, গঙ্গাধরসহ রয়েছে ১৬টি নদ-নদী যা কুড়িগ্রাম জেলায় জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এসব নদ-নদীতে সাড়ে ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপচরসহ প্রায় ৫ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিবছর বন্যা এলেই বাড়িঘর ছেড়ে তাদের কোনো উঁচু এলাকায় পরিবার ও সম্পদ নিয়ে স্থানান্তরিত হতে হয়। এ সময় হাঁস-মুরগি, সবজি বাগানসহ বিভিন্ন সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। চলতি বছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরডিআরএস বাংলাদেশ’র ট্রান্সবাউন্ডারি ফ্লাড রেজিলেন্স প্রকল্প ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন চরাঞ্চলে বেসরকারিভাবে বিন্যামূল্যে ১০৫টি বসতবাড়ি উঁচু করে দিয়েছে। এর ফলে এবার বড় বন্যা হলেও আর এসব বাড়িতে পানি উঠবে না। তাদের আর বাড়িঘর ছেড়ে দূরে কোথাও যেতে হবে না। এ বছর বাড়িতেই পরিবার নিয়ে নিজস্ব সম্পদসহ নির্ভাবনায় থাকতে পারবে তারা। বাড়ির উঠানে চাষাবাদ করতে পারবে সবজি ও ফলমূলের। এছাড়া বাড়ির অভিভাবকরা পরিবার রেখে নিশ্চিন্তে জেলার বাইরে কাজ করতে যেতে পারবে। তবে যাদের বাড়ি উঁচু করা হয়নি এমন দরিদ্র পরিবারগুলোর দাবি তাদের বসতবাড়িগুলো উঁচু করে দিলে তারাও স্বস্তিতে থাকতে পারত।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চর দাগারকুটি চরের জামেনা বেগম জানান, ‘বন্যা এলে ছোট বাচ্চা, বৃদ্ধ ও গরু-বাছুর নিয়ে বিপদে থাকতে হতো। এখন আর সেই কষ্ট ভোগ করতে হবে না। এ বিষয়ে আরডিআরএস বাংলাদেশ’র ট্রান্সবাউন্ডারি ফ্লাড রেজিলেন্স প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা হাসানুল কবির পলিন জানান, ‘বন্যা-পরবর্তী পূনর্বাসনের জন্য চরাঞ্চলে ১০৫টি বসতবাড়ি উঁচু করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী বন্যায় তাদের সহনশীলতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।’ উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রাজ্জাকুর রহমান রাজ্জাক জানান, ‘আমাদের চরাঞ্চলে কিছু দুস্থ মানুষ রয়েছে, যাদের পক্ষে বসতবাড়ি মাটি কেটে উঁচু করা ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা সেটা করতে পারছিল না। এই চরে কিছু গরিব পরিবারের বসতবাড়ি উঁচু করে দেয়া হয়েছে। তাদের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য কাজে লাগবে।’
এ নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, ‘জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বন্যার সম্ভাবনা থাকে, সেসব এলাকায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে বসতভিটা উঁচুকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এ কর্মসূচিটি আরও বেগবান করা হবে যাতে ওই এলাকার মানুষ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রেহাই পান।’