আমানুর রহমান খোকন, কুড়িগ্রাম: প্রতিকূল অবস্থায় থেকে ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে কুড়িগ্রামের কৃষকরা কলা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বারবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কুড়িগ্রামে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কলা চাষ। অর্থকারী ফসল কলা চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছেন কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা। যার কারণে বেড়েই চলছে কলা বাগানের সংখ্যা। একরের পর একর কলা বাগান করে বছর শেষে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করতে পারায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন কলা চাষে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষের খরচ অনেক কম, লাভ বেশি হওয়ায় পতিত ও অনাবাদী জমিতে কলা চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ অঞ্চলে শুধু জৈব সার ব্যবহার করে কলা চাষ করা সম্ভব। এছাড়া কলা চাষের পরিচর্যা খরচও অনেক কম হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, কৃষি শ্রমিক বেশি লাগে না বলে কৃষকদের কলা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। কুড়িগ্রাম জেলায় এবারে ২৯০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হচ্ছে। জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধ কুমর, ফুল কুমরসহ বিভিন্ন নদী অববাহিকার বেশ কিছু চরাঞ্চলে এবার কলার চাষ ভালো হয়েছে। ফলে নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে কলা চাষের চাহিদা বাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার কলার বাম্পার ফলন হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
সদর উপজেলার ধরলা তীরবর্তী এলাকার কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায় কলা চাষে। তাই বন্যায় অন্য ফসলের ক্ষতি হওয়ায় এখন কলা চাষ করছি। জৈব সার ব্যবহার করার কারণে এখানে ফলন ভালো হয়। কলা চাষে খরচও কম হয়।
তিনি আরও বলেন, এ বছর ৮ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাগর কলা, চিনিচম্পা, চাঁপা, মালভোগ, অমৃত সাগর ও মেহর সাগরসহ বিভিন্ন জাতের চারা রোপণ করেছি। এসব জাতের কলাগাছ থেকে অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ৩০০ থেকে ৪০০ চারা রোপণ করেছি। পৌর এলাকার ভেলাকোপা গ্রামের হোসেন আলী বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। ফলনও ভালো দেখা যাচ্ছে। এখনও কলা বিক্রি শুরু করিনি। আশা করছি বন্যায় যে ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিয়ে বেশ লাভবান হব। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাগানের ক্ষতি হলে আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
সদরের হলোখানা ইউনিয়নের মাস্টারের হাট গ্রামের কলা চাষি আনিছুর রহমান বলেন, কলা চাষে লাভের পাল্লাই ভারি থাকে। তাছাড়া কলা বিক্রিতে কোনো ঝামেলা হয় না। পাইকাররা জমি থেকেই কলা কেটে নিয়ে যায় ও কলার কাঁদিও আগাম বিক্রি করা যায়। এটি কৃষকদের বাড়তি সুবিধা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ মোঃ আজিজুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক) জানান, কুড়িগ্রামে দিন দিন কলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ বছরে জেলায় সমতল চরাঞ্চল ও পতিত জমিতে ৩১০ হেক্টর জমিতে কলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্জিত হয়েছে ২৯০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১২০ হেক্টর বেশি জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা চাষ হচ্ছে।