কুমিল্লার তিন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি ৪ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: তিনটি প্রতিষ্ঠান বিক্রয় গোপন করেছে প্রায় ২৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যার মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে প্রায় ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কুমিল্লা শহরের এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় গোপন ও ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)।

এই তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑভাটপাড়া ধনপুর সোয়াগাজীর কিষোয়ান স্নাকস লিমিটেড, ভাটপাড়ার বনফুল অ্যান্ড কোংয়ের কারখানা ও বিসিক শিল্পনগরীর ফরিদ ফাইভার অ্যান্ড উইভিং লিমিটেড।

মহাপরিচালক জানান, কিষোয়ান স্নাকস লিমিটেড ও বনফুল অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠান দুটি মিষ্টি ও বেকারি পণ্য উৎপাদন করে সারাদেশে সরবরাহ করে এবং একই মালিকানাধীন। এছাড়া ফরিদ ফাইভার অ্যান্ড উইভিং প্রতিষ্ঠানটি সামুদ্রিক জাল ও রশি উৎপাদন করে।

ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক মুনাওয়ার মুরসালিনের নেতৃত্বে একটি দল গত ১৭ জানুয়ারি তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেন। এতে ভ্যাট গোয়েন্দারা ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির আলামত সংগ্রহ করেন। অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের মূসক-সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের অনুরোধ করা হলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ মূসক-সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে ব্যবহƒত কম্পিউটাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলাদি তল্লাশি করে বাণিজ্যিক বিক্রয় চালান ও বিক্রয় রেজিস্টার জব্দ করা হয়।

ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্তে কিষোয়ান স্নাকস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মেয়াদে ৫ শতাংশ হারে পণ্যের অপ্রদর্শিত

 বিক্রয়ের মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ছিল ১৪ কোটি ৭৬ লাখ এক হাজার ২৯ টাকা, যার ওপর প্রযোজ্য মূসক ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ৫২ টাকা। এছাড়া ১৫ শতাংশ হারে পণ্যের অপ্রদর্শিত বিক্রয়ের মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৫ কোটি ৮২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩৪ টাকা, যার ওপর প্রযোজ্য মূসক ৮৭ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৫ টাকা। তদন্ত মেয়াদে সর্বমোট অপ্রদর্শিত মূসক এক কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৬ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ৯৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৭ সুদ টাকা প্রযোজ্য।

তিনি বলেন, বনফুল অ্যান্ড কোং-এর ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মেয়াদে জব্দকৃত দলিলাদি অনুযায়ী বিক্রয় পাওয়া যায় ৬ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৪ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩ কোটি ৩১ লাখ ২৮ হাজার ৬২৫ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার ২৯ টাকা কম বিক্রয়মূল্য দেখিয়েছে, যার ওপর প্রযোজ্য মূসক ৪১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬০ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭১৬ সুদ টাকা প্রযোজ্য।

এছাড়া ফরিদ ফাইভার অ্যান্ড উইভিং লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে জব্দকৃত দলিলাদি অনুযায়ী, বিক্রয় পাওয়া যায় ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ৬৭ হাজার ৬২১ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৩১ কোটি ৮৭ লাখ ২৭ হাজার ৩৪৬ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ৭ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার ২৭৫ টাকা কম বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে, যার ওপর প্রযোজ্য মূসক এক কোটি ২ লাখ ১৮ হাজার ২৯৭ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫৩ টাকা সুদ প্রযোজ্য। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে মোট মূসক বাবদ ৩ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ৬৩৩ টাকা এবং সুদবাবদ এক কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬ টাকাসহ সর্বমোট ৪ কোটি ১৫ লাখ ৩ হাজার ৬৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। অভিযানে প্রাপ্ত কাগজপত্র ও অন্যান্য তথ্যাদি যাচাই করে ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদি পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৩ মাস তদন্ত করে প্রতিষ্ঠান তিনটির বিরুদ্ধে গতকাল ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে উদঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইন অনুযায়ী, পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে মামলা তিনটি সংশ্লিষ্ট কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও মনিটর করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০