শেয়ার বিজ ডেস্ক: করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রভাব কাটিয়ে বর্তমানে বিসিক কুমিল্লার ১৩০টি সচল প্রতিষ্ঠানে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। সূত্রমতে, সরকার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সংকট কাটাতে ২০ হাজার কোটি টাকার শিল্প ঋণের প্যাকেজ ঘোষণা করে। কম সুদে দেয়া ওই ঋণের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ২০০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে কুমিল্লা জেলা। চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রামের পর এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ওই ঋণ কার্যক্রম কমিটিতে বিসিক কুমিল্লাকে রাখা হয়েছে। ওই ঋণের বাইরে সম্প্রতি বিসিক কুমিল্লার জন্য ১০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে সরকার, যা বিসিক কুমিল্লা কর্তৃপক্ষ সরাসরি বণ্টন করবে। ব্যাংকের সঙ্গে লিয়াঁজো করে তারা এ ঋণ সহায়তা দিবেন। সহজে ব্যাংক ঋণ পাওয়া, বড় ঋণ সহায়তার আশ্বাস এবং করোনা পরিস্থিতির উন্নয়ন হওয়াতে পুনরায় সচল হয়েছে এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। খবর: বাসস।
মেসার্স আক্তার টেডার্সের স্বত্বাধিকারী আক্তার হোসেন জানান, খুব সহজে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার জন্য বিসিক কর্তৃপক্ষ সহায়তা করছে। তাই প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে সমস্যা হচ্ছে না। আশেক ফুড অ্যান্ড মিলিং ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপক শরীফুল ইসলাম জানান, করোনার সময়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়নি। বিসিক কর্তৃপক্ষ নিয়মিত মনিটরিং করেছে।
জানা যায়, ১৯৬০-১৯৬১ সালে ৫৪ দশমিক ৩৫ একর এলাকায় স্থাপিত হয় বিসিক কুমিল্লা অঞ্চল। যাতে ব্যয় হয় ৮৪ দশমিক ১৮ লাখ টাকা। এতে মোট প্লট সংখ্যা ১৫৫টি। ছয়টি প্লটের মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক ভবন ও ওয়াটার ট্যাঙ্ক। বাকি ১৪৯টি শিল্প প্লটে ১৪২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে। সচল থাকা ১৩০টি প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন সাত হাজার ৭১৪ জন। যার মধ্যে তিন হাজার ৯৪৩ জন পুরুষ ও তিন হাজার ৭১১ জন নারী।
বাংলাদেশের আটটি পুরোনো বিসিকের মধ্যে কুমিল্লা একটি। এবিসিডি ও এসএ পাঁচ ক্যাটেগরির প্লট বরাদ্দ আছে। সর্বনি¤œ তিন হাজার ও সর্বোচ্চ ২৫ হাজার বর্গফুটের প্লট আছে বিসিকে। প্রতি বর্গফুট ৬৫৬ টাকা করে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয় জেলা প্রশাসন। বিসিক কুমিল্লায় রয়েছে একাধিক স্টিল মিল, বেকারি, আয়ুর্বেদিক তৈরির কারখানা, আটা ও পাটজাত পণ্য তৈরির কারখানা, অ্যালুমিনিয়াম, সিলভার ও প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানা এবং কয়েকটি টেক্সটাইল।
বিসিক কুমিল্লা জেলার উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রোকন উদ্দিন বলেন, বন্ধ থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু হলে এবং বিসিকের জন্য বরাদ্দ ঋণ কার্যক্রম দ্রæত শুরু করে দিতে পারলে বিসিক কুমিল্লায় সর্বসাকুল্যে ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এটা বিরাট ব্যাপার। তিনি জানান, যে ১০০ কোটি টাকা বিসিক কর্তৃপক্ষ সরাসরি বিতরণ করবে, তা অল্প সময়ের মধ্যে শুরু করা যাবে। এদিকে বিসিকে ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ যারা নিয়েছেন, তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ দেয়া হচ্ছে। দুই থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত এ ঋণ সহায়তা দেয়া হবে। বিসিক কুমিল্লার সুপারিশের ভিত্তিতে এ ঋণ দিয়ে থাকে কর্মসংস্থান ব্যাংক।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে এ ঋণ সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মসংস্থান ব্যাংক কুমিল্লা শাখার ব্যবস্থাপক খায়রুল আলম কবির। তিনি জানান, ২০২০ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ দেয়া শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ নেয়া ১৮-৩৫ বছর বয়সী তরুণরা শর্তসাপেক্ষে ঋণ নিতে পারবেন। শুরুতে আমরা দুই লাখ টাকা দিয়ে থাকি। শর্ত ঠিকভাবে পূরণ করতে পারলে ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয়। বিসিক কুমিল্লা থেকে এ পর্যন্ত ৩৬২ জন ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
তিনি জানান, বিসিক কুমিল্লার সুপারিশের প্রেক্ষিতে প্রশিক্ষণ নেয়া ব্যক্তিরা পাচ্ছেন কর্মসংস্থান ব্যাংকের ঋণ। দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩৩২ জন। দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে ছয় মাস মেয়াদি কম্পিউটার অ্যান্ড গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স, যাতে ফি দিতে হয় এক হাজার ২৫ টাকা, চার মাস মেয়াদি ইলেকট্রিক অ্যান্ড হাউজ ওয়্যারিং কোর্স, যাতে ফি ৬২৫ এবং তিন মাস মেয়াদি ফ্যাশন ডিজাইন ও ফুড, ফি দিতে হয় ৫২৫ টাকা। পাশাপশি ৫০ টাকা খরচে পাঁচ দিনব্যাপী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে বিসিক কর্তৃপক্ষ।